শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুশাসন-শুদ্ধাচারে ব্যাংকখাত

সুশাসন-শুদ্ধাচারে ব্যাংকখাত

দেশ সেরা দশ টেকসই ব্যাংক

  • সুশাসন, শুদ্ধাচার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে অনুপ্রেরণা: কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাসটেইনেবল রেটিং প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তালিকায় বেসরকারি খাতের সেরা ১০ ব্যাংককে টেকসই ব্যাংকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামি ধারার ব্যাংক রয়েছে ২টি। একই সঙ্গে সেরা টেকসই মর্যাদা পেয়েছে পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ এ তালিকা প্রকাশ করে।

টেকসই ১০-এর তালিকায় নাম থাকা ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, এবং দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড। তবে মানের দিক থেকে কোন তিনটি ব্যাংক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে তা জানানো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সহযোগিতায় সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ রেটিংটি তৈরি করেছে।

মূলত চারটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মান যাচাই করা হয়েছে। সূচকগুলো হলো টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক (সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইন্ডিকেটর), সবুজ পুনঃঅর্থায়ন (গ্রিন রিফাইন্যান্স), সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর) ও মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা (কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটি)।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে সুশাসন, শুদ্ধাচার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে অনুপ্রাণিত করতে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক এ তালিকা প্রকাশ করেছে। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই এই রেটিং প্রকাশ করা হবে। মুখপাত্র বলেন, বেশকিছু সূচকের ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘সিএসআর ব্যয়, গ্রিন ফাইন্যান্স, কোর ব্যাংকিং কার্যক্রম, খেলাপি ঋণের হার।

আরও পড়ুনঃ  ইলেক্টোরাল ভোটে বাইডেন ২৩৮, ট্রাম্প ২১৩

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচকের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণের মান, মূলধন পরিস্থিতি, এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবুজ অর্থায়ন, ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, গ্রামীণ অর্থায়ন, নারী ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, কৃষিতে টেকসই অর্থায়ন, সবুজ অর্থায়নের ক্যাটাগরি ও প্রকল্পের পরিমাণ, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ, অভ্যন্তরীণ সবুজ ব্যাংকিং ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, সেরা টেকসই ব্যাংকের তালিকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নাম রয়েছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের এবং গর্বের। আমরা পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন করেছি। সৌরবিদ্যুৎসহ জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া যেন না হয় এমন প্রকল্পকে বেশি গুরত্ব দিয়ে কাজ করেছি। এই স্বীকৃতি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সুনাম বাড়িছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, শুরু থেকেই ইসলামী ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করে থাকে। শুরুর দিকে সদকা তহবিল নামে আমরা সিএসআর ব্যয় করতাম। পরে এ তহবিলের নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন রাখা হয়েছে। এ ফাউন্ডেশনের অধীনে আমরা সারা দেশে সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। সিএসআরের বাইরে কেবল ইসলামী ব্যাংকের যাকাত ফান্ড নামে একটি তহবিল আছে। প্রতি বছরই আমরা ইসলামী শরিয়াহ অনুসরণ করে যাকাত ফান্ডের অর্থ বিতরণ করছি।

আরও পড়ুনঃ  বৃষ্টিতে ডুবলো পাকা ধানের ক্ষেত, দুর্ভোগে কৃষক

এদিকে সেরা টেকসই মর্যাদা পাওয়া পাঁচটি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো- অগ্রনী এসএমই ফাইন্যান্সিং, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের প্রতি একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স পলিসির  নির্দেশনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট খেলাপি ঋণের হার, ঝুঁকিভারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধনের অনুপাত, লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও, নেট স্টেবল ফান্ডিং রেশিও, কোর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, সম্পদের বিপরীতে আয়, ইকুইটির বিপরীতে আয়, নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন ও এফিসিয়েন্সি রেশিওর মতো বিষয়গুলোর ভিত্তিতে।

এদিকে সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও জলবায়ু ঝুঁকি তহবিলের অনুদানের অর্থ ব্যয়ের মতো বিষয়গুলোও বিবেচনায় এসেছে। পাশাপাশি সবুজ পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়েছে বার্ষিক পুনঃঅর্থায়নের হার, খাত ও পণ্যভিত্তিক পুনঃঅর্থায়নের পাশাপাশি গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের ডলার ও ইউরো কম্পোনেন্টের ভিত্তিতে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাসটেইনেবল রেটিং প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তালিকায় বেসরকারি খাতের সেরা ১০ ব্যাংককে টেকসই ব্যাংকের মর্যাদা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইসলামি ধারার ব্যাংক ছিলো তিনটি। প্রথমবারের মতো টেকসই ১০-এর তালিকায় নাম থাকা ব্যাংকগুলো হচ্ছে- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। তখন সেরা টেকসই মর্যাদা পায় পাঁচটি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- হজ ফাইন্যান্স লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, সৌদি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (সাবিনকো) ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেড।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন