ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রপ্তানি আয়ে বিস্ময়

রপ্তানি আয়ে বিস্ময়
  • ৩৪.৮৪ কোটি থেকে ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক
  • ৫০ বছরে রপ্তানি বৃদ্ধি ১৪৯৪৯ শতাংশ

পরিকল্পিতভাবে রপ্তানি বাড়ানোর প্রচেষ্টার সুফল

বাণিজ্যমন্ত্রী

মাত্র ৫০ বছরেই ভিন্ন এক মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। সদ্যস্বাধীন দেশে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মাত্র ৩৪ দশমিক ৮৪ কোটি মার্কিন ডলারের রপ্তানি দিয়ে শুরু হয় বৈদেশিক রপ্তানি। সেটি গত ২৭ জুন প্রথমবারের মত ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেই রপ্তানি বাণিজ্যে এ রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। রপ্তানি আয়ে মোট প্রবৃদ্ধি ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

গত ২৭ জুন সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এর মধ্যে দিয়ে সেবা ছাড়া শুধু পণ্য রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের রেকর্ড হয়।

এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ১২ মাসে বাংলাদেশে থেকে পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এগিয়ে এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির ওপর ভিত্তি করে পরের অর্থবছরের জন্য চার হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।

রপ্তানিতে ১০ বছরের পার্থক্যে দেখা যায়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয় ৩৪ দশমিক ৮৪ কোটি মার্কিন ডলার, ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে ৬৮.৬৬ মার্কিন ডলার, ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ২৩৮.৩৯ মার্কিন ডলার, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ৬৫৪.৮৪ মার্কিন ডলার ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলার। গত ৫০ বছরের পার্থক্যে দেখা যায়, প্রথম দশ বছরে ১৯৭২-৭৩ হতে ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে ৩৩.৪২ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। ১৯৮২-৮৩ হতে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে পার্থক্য ছিল ১৬৯.৬৩ শতাংশ। ১৯৯২-৯৩ হতে ২০০২-০৩ অর্থবছরে ৪১৬.৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ২০০২-০৩ হতে ২০২১-২২ অর্থবছরের পার্থক্য ছিল ৪৫৫৩.৪২ শতাংশ। অর্থাৎ ৫০ বছরে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ হাজার ৯৪৯ কোটি শতাংশ।

গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এককমাস হিসেবে সর্বোচ্চ রপ্তানি ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫ শতাংশ এবং আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুনে ৩৫৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। আর গত জুনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর আগে একক মাস হিসেবে সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে সর্বোচ্চ ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় এসেচিল। অর্থাৎ গত জুনে গত ডিসেম্বরের চেয়েও ৪ লাখ ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিরখাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরাবরের মতই তৈরি পোশাক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে, যা মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৮১ শতাংশ। পোশাকখাতে গত অর্থবছরের আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এই প্রবদ্ধির ওপর ভর করে চলতি অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন রপ্তানিকারকরা।

হোম টেক্সটাইলখাত থেকে এবার রপ্তানি হয়েছে ১৬২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, চামড়া ও চামড়া জাতীয় পণ্য রপ্তানিতে ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার পর সামগ্রিক রপ্তানি ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ফলে মোট রপ্তানি ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলার হয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের, যদিও এ খাতে ৩ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান একটি ওয়েবিনারে ১৮ জুন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ এবার হয়তো ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যরপ্তানি করবে। তবে আমদানি কিন্তু ৬০-৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের আমদানিতে কিছুটা লাগাম টানা দরকার। প্রয়োজনে বিলাসবহুল পণ্য ৬ মাস আমদানি বন্ধ রাখতে হবে।

রপ্তানির সার্বিক পরিস্থিতি দেখে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, পরিকল্পিতভাবে রপ্তানি বাড়ানোর যে প্রচেষ্টা ছিল এটা তারই সুফল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানিখাতের ওপর অব্যাহত নজর রেখেছিলেন। কোভিড পরবর্তী সময়ে সার্বিক অবস্থাটা ভালো ছিল, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ছিল। আমাদের রপ্তানিটা বেড়েছে, নতুন নতুন অনেক আইটেম বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করছে। এ বছর আশা করছি আরও ইমগ্রুভ করবে। আমরা সেবা ও পণ্য মিলিয়ে ৫১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলাম। সেটা এখন ৬০ বিলিয়নের ঘরে এসে থেমেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ৫২ বিলিয়ন আর সেবা রপ্তানি থেকে এসেছে ৮ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি হয়েছে যেটা আসলেই একটা ভালো খবর। এ বছর আমরা ৬৫ বিলিয়ন ডলারের একটা লক্ষ্য ঠিক করতে চাচ্ছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন