শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতিবৃষ্টিতে বন্দরে স্থবিরতা

চট্টগ্রাম বন্দরের

টানা বর্ষণের কারণে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের কার্যক্রম। অতি ও ভারীবর্ষণের ফলে বন্দরের অভ্যন্তরেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এতে বন্দরের ভেতরে-বাইরে জাহাজজট তীব্র হচ্ছে। বহির্নোঙরে পণ্য বোঝাই ৪০টির মতো মাদার ভ্যাসেল অলস অপেক্ষা করছে। মাদার ভেসেলে মালামাল বহনের অপেক্ষায় অলস বসে আছে শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ। বন্দরে দেখা দেয়া জটের কবলে পড়তে যাচ্ছে কনটেইনার জাহাজও। সবকিছু মিলে প্রতিকূল পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্ককে হুমকির মুখে ফেলছে।

মাদার ভেসেল অতিরিক্ত একদিন বসে থাকলে ১০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতি

শিপিং এজেন্টরা

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ৯২ শতাংশেরও বেশি পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়। জোয়ার-ভাটানির্ভর বন্দর চ্যানেলে বড় আকৃতির মাদার ভ্যাসেলগুলো প্রবেশ করতে পারে না। সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট এবং ১৯০ মিটার লম্বা মাঝারি আকৃতির জাহাজ বন্দরের জেটিতে বার্থিং নিতে পারে। এর চেয়ে বড় জাহাজে পণ্য আনা হলে সেগুলো বহির্নোঙরে গভীর সাগরে অবস্থান করে। সেখান থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে দেশব্যাপী পরিবহন করা হয়। উন্মুক্ত সাগরে জাহাজের হ্যাজ খুলে ক্রেন দিয়ে পণ্য নিয়ে তা লাইটারেজ জাহাজে দেয়া হয়।

এসব কার্যক্রম সম্পন্ন হয় খোলা অবস্থায়। তবে বৃষ্টি হলে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে ভিজে গেলে নষ্ট হবে এমন পণ্য বৃষ্টির সময় হ্যান্ডলিং পুরোপুরি বন্ধ থাকে। বহির্নোঙরে গম, কয়লা, মটরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল, সরিষা, সিমেন্ট ক্লিংকার প্রভৃতি পণ্য বেশি খালাস করা হয়। এর বাইরে গত কয়েক বছর ধরে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। বৃষ্টিতে পাথর হ্যান্ডলিংয়ে অসুবিধা না হলেও ক্লিংকার থেকে শুরু করে অন্যান্য সব পণ্য হ্যান্ডলিং বন্ধ করে রাখতে হয়।

বৃষ্টিতে কাজ করা কঠিন হওয়ায় অলস বসে আছে শ’খানেক লাইটারেজ জাহাজ

-মাহবুব রশিদ, প্রধান নির্বাহী, ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল

গত কয়েকদিন ধরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মাঝারী থেকে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে গত চার দিন ভারীবর্ষণও হয়েছে। বহির্নোঙরে কিছু কার্যক্রম চললেও দিনের বেশিরভাগ সময় অলস বসে থাকছে জাহাজ। বন্দরের ভেতরেও কাজের গতি কমে গেছে। বৃষ্টির সময় উন্মুক্তস্থানে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না অনেক জাহাজে।

আরও পড়ুনঃ  এশিয়ার সেরা হয়ে সোনা জিতলেন রোমান-নাসরিন

এর আগে গত ১৬ জুন ৩০টি লাইটার পণ্য বোঝাই করতে বহির্নোঙরে গেলেও বৃষ্টির কারণে সেগুলো বসে ছিল। পরদিন ১৭ জুন আরও ৩০টি লাইটার যাওয়ার কথা ছিল। যেহেতু কাজ হচ্ছে না তাই ১০ লাইটার পাঠানো হয়েছে। বাকি ২০টি কূলে অলস বসে ছিল। ওইদিন মোট ২২টি মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসের শিডিউল থাকলেও বৃষ্টির কারণে ভেস্তে গেছে।

শিপিং এজেন্টরা বলছেন, একটি মাদার ভেসেল অতিরিক্ত একদিন বসে থাকলে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। যদিও বহির্নোঙরে বাল্ক (খোলা) কার্গো খালাস ব্যাহত হলেও জেটিতে কনটেইনার খালাস স্বাভাবিক ছিল। লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের প্রধান নির্বাহী মাহবুব রশিদ বলেন, বৃষ্টির মধ্যে কাজ করা কঠিন। শ’খানেক লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে।

বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বন্দরের ভেতরে ও বহির্নোঙরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাচ্ছে। দেখা দিয়েছে জাহাজজট। বৃষ্টি লাগাতার হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।

বহির্নোঙরে কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বর্ষাকালে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। বৃষ্টিতে কাজের সমস্যা হয়। বহির্নোঙরে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জট হয়। বৃষ্টি বন্ধ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন