শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৫ বছর ধরে পরিত্যক্ত বিপজ্জনক ৭শ টন রাসায়নিক

বৈরুতের বিপদে চট্টগ্রাম বন্দর!

বৈরুতের বিপদে চট্টগ্রাম বন্দর!

চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকা নিলাম অযোগ্য ৭০০ টন বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সীতাকুন্ডের বিএম কন্টেনার ডিপোতে আগুন লেগে রাসায়নিক ভর্তি কন্টেনার বিস্ফোরণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নিলাম অযোগ্য এসব রাসায়নিক ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরের পর বছর এভাবে রাসায়নিক পণ্য পড়ে থাকায় বড় ধরনের বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। লেবাননের বৈরুত বন্দরের পুনরাবৃত্তি যেন চট্টগ্রাম বন্দরে না ঘটে সেই লক্ষ্যে এসব পণ্যের দ্রুত বন্দর ইয়ার্ড থেকে অপসারণ চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সূত্রমতে, এই বিপজ্জনক পণ্য পড়ে থাকায় বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং একই সাথে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এরই মধ্যে গত বছরের ১১ নভেম্বর বন্দরের পি শেডে পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্যের মধ্যে একটি অগ্নিকান্ডও সংঘটিত হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, এসব বিপজ্জনক পণ্যের মধ্যে ১৯৯৪ সালের পণ্যও রয়েছে। ধ্বংসের তালিকায় থাকা এসব রাসায়নিকের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কঠিন পদার্থ, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ডাইথোনাইট, সালফক্সিলেট, হাইড্রোক্লোরাইড, নাইট্রো গ্লু সলিউশন, কস্টিক সোডা, ফার্মাসিউটিক্যালস উপাদান, সালফেট, সালফিউরিক এসিড, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, থিনার, বেভারেজ কনসেনট্রেট, সোডিয়াম সালফেট, মিথানল, ইথাইল হেক্সানল, নাইট্রিক এসিড, ক্যালসিয়াম অক্সাইডসহ বিভিন্ন বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য। গত ১৫-৪০ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের পিশেডে এসব রাসায়নিক পড়ে আছে। এর আগে অবশ্য এসব রাসায়নিক কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কয়েক দফায় নিলামে বিক্রির চেষ্টা করে। কিন্তু বিডারদের আগ্রহ না থাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে এসব রাসায়নিক পণ্য।

আরও পড়ুনঃ  লাইটারেজ জাহাজের অবাধে সাগরপাড়ি

মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক ধ্বংস করতে কিছু নিয়ম মানতে হয়। সাধারণ অন্য সব মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য স্কেভেটর দিয়ে বড় গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করা হলেও রাসায়নিকের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ রাসায়নিক পদার্থ মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে ফেলে। তাই পরিবেশ অধিপ্তরের পরামর্শ মেনে রাসায়নিক পদার্থ ধ্বংস করতে হয়। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কারখানার জিও সাইকেল প্রকল্পে ৪৯ টন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ধ্বংস করা হয়।

এছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৮ টন সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সালফেট, কস্টিক সোডা, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, ব্যাটারি তৈরির উপকরণ এবং ওষুধ তৈরির নানা রাসায়নিক পদার্থ ও লেবানন থেকে ফেরত আসা ত্রুটিযুক্ত প্রায় সাড়ে ১৭ টন প্যারাসিটামল সিরাপ ধ্বংসের জন্য পাঠানো হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার মো. আল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ধ্বংসযোগ্য ৭০০ টন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক রয়েছে। আমরা সেইসব রাসায়নিক ধ্বংসের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের মতামত চেয়েছি। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা ধ্বংস কার্যক্রম শুরু করব। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাসায়নিক ধ্বংসের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি পাইনি।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৪ আগস্ট লেবাননের বৈরুত বন্দরে এ ধরনের রাসায়নিক পদার্থের বিস্ফোরণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা রাসায়নিক ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে সময় চট্টগ্রাম বন্দরে কী পরিমাণ বিপজ্জনক পণ্য আছে তা খতিয়ে দেখার জন্য ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বন্দরের ভেতরে ২৩ ধরনের বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্যের মজুদ খুঁজে পায়।

আরও পড়ুনঃ  চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০০ টন নিলামে পেঁয়াজ

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন