প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে করদাতাদের জন্য আয়কর মুক্তসীমা ৩ লাখ টাকা অপরিবতর্তি রাখা হয়েছে। একই সাথে কোম্পানির করহার কমানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। “চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আয়কর মুক্তসীমা ৩ লাখ টাকা রাখা হয়েছিল। অর্থবছরে কোনো ব্যক্তি ৩ লাখ টাকার বেশি আয় করলে তাকে কর দিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য আয়কর মুক্তসীমা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। যা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছিল। পরবর্তী অর্থবছরে আয়কর মুক্তসীমা বহাল রাখা হয়। নারী করদাতা, সিনিয়র করদাতা, প্রতিবন্ধী করদাতা, তৃতীয় লিঙ্গ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়কর মুক্তসীমা বেশি।
এদিকে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তসহ অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব। যেসব তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে ইস্যু করা হয়েছে। সেসব কোম্পানির করহার ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে বাজেটে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া এই ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কর ছাড়ের সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সব আয় ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ১২ লাখ টাকার উপরে ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে। যেসব তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ বা তার কম শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে ইস্যু করা হয়েছে।
সেসব কোম্পানির করহার অপরিবর্তিত বা ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ থাকবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২ দমমিক ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে গতবারের ৩০ শতাংশ করহার কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। এক্ষেত্রে সব আয় ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ১২ লাখ টাকার উপরে ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। বাজেটে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি ও মোবাইল ফোন কোম্পানির করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া বাজেটে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- পনির, দই, তামাকজাত পণ্য, এসি, মোবাইল, পেপার কাপলেট, জিআই ফিটিং, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, গাড়ির সিলিন্ডার, লাইটার, কম্পিউটার প্রিন্টারের টোনার, ট্রেনের প্রথম শ্রেণির ভাড়া, মেডিটেশন সেবার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, আমদানিকৃত ইলেকট্রনিক ক্যাবল, সব ধরনের পাইপ, আমদানিকৃত মোটরসাইকেল, সব ধরনের রাবার জাতীয় পণ্য, আমদানিকৃত সোলার প্যানেল, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, আমদানিকৃত চেয়ার, প্রিন্টিং কালি, আমদানিকৃত বিলাসবহুল পাখি, কিট-মাস্কসহ সব ধরনের কোভিড-১৯ সরঞ্জাম ইত্যাদি।
বাজেটে বেশকিছু পণ্যের দাম কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- কানে শোনার যন্ত্র, হুইল চেয়ার, এলইডি টিভি, কাজুবাদাম, পশুখাদ্য, হ্যান্ড টাওয়েল, ক্লিনিক্যাল বেডশিট, এসি রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম, হাঁস-মুরগির খামারের যন্ত্রপাতি, কীটনাশক, কৃষিপণ্য, উড়োজাহাজের আমদানি মূল্য, এলপিজি গ্যাস, মুড়ি, চিনি, পাওয়ার টিলার, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ব্যাটারি-চার্জার, পোলট্রি ও ফিশ ফিড, ব্রেইল বুক, পলিথিন ব্যাগ, স্টেইনলেস স্টিল, প্লাস্টিক ব্যাগ (ওভেন প্লাস্টিক ব্যাগসহ) ও মোড়ক সামগ্রী ইত্যাদি।