শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে বাজেট সহায়তা ছাড়

বাড়ছে-বাজেট-সহায়তা-ছাড়
  • প্রকল্প সহায়তায় পিছিয়ে উন্নয়ন সহযোগীরা
  • ১০ মাসে রেকর্ড সাড়ে ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা
  • বিদেশি ঋণ সহায়তায় নতুন রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির ধাক্কায় নাজুক অবস্থায় পড়েছে দেশের বিভিন্ন খাত। তবে দ্রুতই আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে নাজুক খাতগুলো। তবে করোনাকালে রাজস্ব আদায় ধীর গতি হওয়ায় সরকারের বড় ধরনের অর্থসহায়তার প্রয়োজন পড়ে। আর এ কারণে সরকার বেশি বেশি বাজেট সহায়তা নিচ্ছে। আর উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সহায়তা ছাড়তে খুব বেশি সময় নিচ্ছে না। যদিও উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তার দিকে দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে থাকছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ বিদেশি ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি ও ছাড়ের হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশকে ৭ হাজার ৭০৮ মিলিয়ন ডলারের ঋণসহায়তা দিয়েছে। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৩৩ পয়সা হিসেবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর আগে ১০ মাসে এত বেশি বিদেশি ঋণসহায়তা কখনো আসেনি দেশে। তথ্যমতে, বিদেশি ঋণ সহায়তায় নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলছেন, মহামারির কারণে রাজস্ব সংগ্রহ ধীরগতি দেখা গেছে। সেজন্য এখন অর্থের প্রয়োজন বেশি হওয়ায় সরকার আরও বেশি বাজেট সহায়তা নিচ্ছে। আর উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সহায়তা ছাড়তে খুব বেশি সময় নিচ্ছে না। তবে প্রকল্প সহায়তার প্রাপ্তি ততটা বাড়ছে না।

ঋণ ছাড় পাওয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, করোনা মহামারির সময় বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে দ্রুত ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে। আমরা যতটা আশা করেছিলাম, তারচেয়েও বেশি ঋণসহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে করোনার টিকা খাতে ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ মেটাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

আরও পড়ুনঃ  রাজধানীতে বাবা-মা ও বোনসহ একই পরিবারের ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার

চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পাওয়া গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে। তারা ১০ মাসে ছাড় করেছে ১৯৮ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এরপরই জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অবস্থান। এ সময়ে সংস্থাটি অর্থছাড় করেছে ১৭০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরের ১০ মাসে সংস্থাটি ১১৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

এছাড়া রাশিয়া ১০৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার ছাড় করেছে। চীন ছাড় করেছে ৭৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ২৯ কোটি ডলার, ভারত ২০ কোটি ডলার এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী ৫১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করেছে।

গত ১০ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এডিবির কাছ থেকে ১১১ কোটি ডলার। ঋণ প্রতিশ্রুতির তালিকায় ছিল এআইআইবির ৭১ কোটি, জাপানের ৫৩ কোটি এবং চীনের ১১২ কোটি ডলার। অর্থছাড় করলেও ভারত ও রাশিয়া কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

ইআরডির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে নতুন করে বাংলাদেশকে ৫৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতারা। এ সময়ে ঋণ ছাড় করেছে ৭৭০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৭৫২ কোটি ডলার পাওয়া গেছে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে। ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে। তবে গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৪৮৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার ছাড় করে দাতারা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে ঋণ ছাড় বেড়েছে ২৫৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৫২৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দাতারা।

আরও পড়ুনঃ  জ্বালানি-শিক্ষা খাতে বাংলাদেশকে ৯৫১ কোটি টাকা দেবে ইইউ

অন্যদিকে আবার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও বাড়ছে বাংলাদেশের। ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ পরিশোধ করেছে এক হাজার ৫৯৫ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৪৭ মিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা।

সার্বিক বিবেচনায় গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে এক হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন এই ঋণ পরিশোধ দিন দিন আরো বাড়বে। তার অন্যতম কারণ হলো, বৈদেশিক সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়ন। অবশ্য তারা এটাও বলেছেন, যদি প্রকল্প সঠিক সময়ে শেষ না করা যায় তাহলে এই বৈদেশিক ঋণ বোঝা হয়ে যাবে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন