শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝড়-শিলাবৃষ্টি-বন্যায় স্বপ্নভঙ্গ

ঝড়-শিলাবৃষ্টি-বন্যায় স্বপ্নভঙ্গ

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গত কয়েক দিনে ঝড়-বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রংপুরে অন্তত এক হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ জেলাতেই কেটে রাখা ধান ভিজে পচে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা দিয়ে শ্রমিক আনলেও লোকসানের আশঙ্কায় কৃষক।

কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে উত্তরের ৮ জেলায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। শুরু থেকে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকলেও ফসল ঘরে তোলার সময় আবহাওয়া অনুকূলে নেই। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। বিশেষ করে অশনির প্রভাবে জেলাগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়-শিলাবৃষ্টি বয়ে গেছে। এতে ৩৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তবে কৃষকরা বলছেন, ঝড়-বৃষ্টিতে বেশির ভাগ জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এমনকি ক্ষেতে জমে থাকা পানিতে ধানের শীষ ডুবে পচে যাচ্ছে। শ্রমিকসংকটে জমির পাকা ধান কাটতেও পারছেন না কৃষক। চোখের সামনেই পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে অনেক কৃষক কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ।

রংপুরের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, এমনিতেই বৈরী আবহাওয়া, তার ওপর আবার শ্রমিকসংকট। একই সঙ্গে ধানের বর্তমান বাজারদর কৃষকের কোমর ভেঙে দিচ্ছে। এই ভাঙা কোমর নিয়ে আগামী মৌসুমের ফসল কী করে চাষ করবেন, এমন ভাবনায় এখন থেকেই শঙ্কিত তারা।

কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, মৌসুমের শেষ সময়ে এসে আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় যেসব জমির ধান ৮০ শতাংশ পেকে গেছে তা দ্রুত কেটে ঘরে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকরা ধান কাটছেন। এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন তারা।

আরও পড়ুনঃ  বিদ্যুৎ খাতে আড়াই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদিআরব

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমি ফল আম, লিচু, কলা, ভুট্টা, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে গেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ফসলের মাঠগুলোতে পানি জমে থাকায় পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে। অথচ এখনো ৫৫ শতাংশ বোরো ধান কৃষকের জমিতে, যার বেশির ভাগই কাটার উপযোগী। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রমতে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে একটি পৌরসভাসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৯ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষকরা জানান, শেষ সময়ে ঝড়-বৃষ্টিতে জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি জমে যাওয়া এক বিঘা জমির ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। কেটে রাখা ধানে পানি জমে আছে। ধানের রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আদনান বাবু জানান, ঝড়-বৃষ্টিতে ধানগাছ পড়ে গিয়ে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। যত দ্রুত সম্ভব পাকা ধান কাটতে হবে।

এদিকে, কুড়িগ্রাম জেলায় বৃষ্টির কারণে ধান কেটে মজুরি দিয়ে কিছুই থাকছে না কৃষকের। বিঘাপ্রতি ধান কাটায় ৮-৯ হাজার টাকা শ্রমিকের মজুরি দিয়ে কৃষককে লোকসান গুণতে হচ্ছে। তার ওপর ঘরে ও মাঠে হাজার হাজার মণ ভিজা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক। কৃষকরা জানান, ঈদের আগে যারা ধান কেটেছেন তাঁদের কাটা ও মাড়াই খরচ কম হয়েছে। ঈদের দিন থেকেই শুরু হয় প্রতিদিন বৃষ্টি। চলতি মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টিতে আগেই মাঠের পর মাঠ ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে। এসব ধানে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় অনেক জমির ধানে পচন ধরেছে।

আরও পড়ুনঃ  জটিলজটে স্বাধীনতাস্মারক নির্মাণকাজ

কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান আলী জানান, এই জেলায় ৮২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। শ্রমিকসংকট মোকাবেলায় কৃষককে কৃষিযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।

লালমনিরহাটে অতিবৃষ্টিতে নিচু এলাকায় পানি বেড়েছে। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। কাটার বাকি থাকা প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর বোরো ধান ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আরো পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিপাতে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা দ্রুত ধান কেটে ফেলছেন। কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, হাওরে তিনি এক বিঘা জমি চাষ করেছেন। পাকা ধান কাটার বাকি ছিল, তা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে।

অন্যদিকে, উত্তরের দিনাজপুর,পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁয়ের প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্তত ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান ঝুঁকিতে পড়েছে। কৃষি বিভাগ জরুরি সভা করে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশনা দিয়েছে।

কৃষি বিভাগের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক এমদাদ হোসেন দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, অসংখ্য জমির ধান পানির নিচে রয়েছে। আমরা সর্তকতা জারি করে দ্রুত কৃষককে ধান কাটার নির্দেশ দিয়েছি। বৈরি আবহওয়ার কাছে আমরা সবাই অসহায়।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন