শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটন রাজস্বে সুখবর সাতছড়ি

পর্যটন রাজস্বে সুখবর সাতছড়ি

বাংলাদেশ জনবহুল, উন্নয়নশীল ও স্বল্প আয়তনের দেশ হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। যে কারণে ওই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে যুগে যুগে মুগ্ধ হয়েছেন এদেশে আগত পর্যটকরা। দেশের পাহাড়-পর্বত, হাওড়-বাওড়, খাল-বিল, নদী-সাগর, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ, মিনারসহ নানা বৈচিত্রে ভরপুর পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলই পর্যটনের উপরকরণ। যা দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ।

পর্যটকেরা মনে করেন, বাংলাদেশে দর্শনীয় যা রয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। দেশে পরিচিত অপরিচিত শত শত পর্যটন স্পট রয়েছে যা সহজেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আর মনকাড়ে। এসব পর্যটন স্পটের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে পর্যটনখাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে পর্যটনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটনস্পট ভ্রমণ করেছেন এক কোটির বেশি দেশি বেদেশি পর্যটক। এতে পর্যটনখাতে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনার অপার দরজা খুলে গেছে।

আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটন শিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এতে গোটা দেশকে ৮টি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। বিগত ২০০৯ সাল থেকে প্রায় এক দশকে পর্যটনখাতে আয় হয়েছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপিতে অবদান রেখেছে।

এক দশক আগে (২০১০) দেশে পর্যটন শিল্প বিকাশে পর্যটন নীতিমালা-২০১০ প্রণয়ন করে। এতে কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও সোনাদ্বীপকে কেন্দ্র করে আদর্শ অবকাশ পর্যটন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটন শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন ও বিকাশে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে দেশের ক্রমসম্প্রসারণমান অর্থনীতিতে বড় ধরণের সফলতা অর্জন সম্ভব হবে।

আরও পড়ুনঃ  ফিডের বিকল্প ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’

গেল দুই বছরে করোনা মহামারির মধ্যে নানা বিধিনিষেধের কারণে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র থমকে ছিল। বড় অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সম্ভাবনার এই খাত। এবার করোনার দাপট কমে আসায় বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ায় বিভিন্ন পর্যটনস্পটে ঢল নেমেছিল।

দেশের পর্যটনখাতের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা সিলেট বিভাগে। সম্প্রতি ঈদ উৎসব ঘিরে এ বিভাগের পর্যটনস্পটগুলোতে পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। এরমধ্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ছিল গত দুই বছরের মধ্যে ভিন্ন চিত্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটন ঘুরতে এসেছেন উদ্যানে। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সের পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে সাতছড়ি উদ্যান।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সকালে পর্যটকদের উপস্থিতি কম থাকলেও বিকেলে বেড়ে দ্বিগুণ হয়। পর্যটকেরা জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিরল প্রজাতির গাছপালা আর বন্যপ্রাণী একসঙ্গে দেখা যায় সাতছড়িতে। যে কারণে এই স্থানটি অন্যরকম ভালো লাগার জায়গা।

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, সাতছড়িতে আমি এবার প্রথম এসেছি। সঙ্গে আমার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে এসেছে। আমরা পত্রিকা এবং ইন্টারনেটে এই উদ্যানের বিষয়ে শুনেছি। এখানে সব কিছু একেবারে ন্যাচরাল। বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণী আর বিরল প্রজাতির গাছ রয়েছে। যেগুলোর নামও কখনো শুনিনি। একটু ভেতরে গেলে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে মন ভরে যায়। সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ।

চট্টগ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে আসা ব্যবসায়ী সুমন চৌধুরী বললেন, দীর্ঘদিন করোনার কারণে কোথাও ঘুরাঘুরি করা সম্ভব হয়নি। এবার যেহেতু করোনার বিধিনিষেধ ওঠে গেছে তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে এলাম। শহুরে জীবন থেকে এই প্রাকৃতিক স্থানে এসে কিছু সময়ের জন্য হলেও জীবনকে উপভোগ করলাম।

আরও পড়ুনঃ  ধূমপান করলে করোনা হয় না, গবেষণার দাবি

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ বলছে, সাতছড়িতে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। শুক্রবার ও শনিবার পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। টিকিট বিক্রির হিসাবে দুদিনে বয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক মিলিয়ে এসেছেন সাড়ে ৭ হাজারের বেশি পর্যটক। গত দুদিনে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকার বেশি। আগের বছরে বন্ধ থাকায় কোনো রাজস্ব আয় হয়নি। সেজন্য এই আয় দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে বন্ধ ছিল সাতছড়ি উদ্যান। গত ২০১৯ সালে রাজস্ব আদায় হয়েছিল সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।

এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য চুনারুঘাট থানা পুলিশের কোনো সদস্যকে সাতছড়ি উদ্যানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় নি। জানতে চাইলে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আশরাফ দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় উদ্যানে সার্বক্ষণিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে।

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। এখানে জরুরি ভিত্তিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ দরকার। কারণ সেখানে নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো খবর পাওয়া যায় না। সাতছড়িতে ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকলে পর্যটকরা নিরাপদে ঘোরাঘুরি করতে পারবেন।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন