শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নয়ন প্রকল্পে আসছে লাগাম

উন্নয়ন প্রকল্পে আসছে লাগাম

দেশে রপ্তানি যে হার বেড়েছে সে তুলনায় আমদানি ব্যয় কমছে না। বরং অনেক বেড়ে গেছে। এর ওপর আবার বছরজুড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে টান পড়েছে। করোনা মহামারিতে প্রণোদনা আর বাজেটে সহায়তা হিসেবে বিদেশি ঋণ বা অনুদান আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অথচ গেল বছরের আগস্টেই রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য সাময়িকভাবে রমজান ও ঈদে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও সেই ধারা অব্যাহত থাকার কোনো সুযোগ নেই।

এমন এক পরিস্থিতিতে রিজার্ভ বাড়াতে অথবা স্থিতিশীল রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখা হবে। এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয় এমন সব উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত রাখার পাশাপাশি নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে সরকার।

সূত্রমতে, ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের সব প্রকল্প, যা বাস্তবায়ন জরুরি নয় এমন সব প্রকল্পের তালিকা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ইতোমধ্যে সব মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেয়া হয়েছে। চিঠিতে প্রকল্পগুলোর বর্তমান বাস্তবায়ন পরিস্থিতি, বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্র ও পরিমাণ বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামীতে মন্ত্রণালয়গুলো কোন ধরনের এবং কী কী প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে, আর সেগুলোতে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে, সে ব্যাপারেও তথ্য জানতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করা প্রয়োজন এবং সেসব প্রকল্প এখনই বাস্তবায়ন না করলে দেশের অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, সেগুলো আমরা ছয় মাস কিংবা আরও পরে বাস্তবায়ন করবো। মন্ত্রী বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও কঠিন হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের ওপরও। যতোদিন বহিঃখাতের এসব প্রভাব পুরোপুরি দূর না হবে, ততোদিন বাংলাদেশকেও এ ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ম্যারাডোনার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ

তথ্যমতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চলতি বছর শেষে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হলেও ধারাবাহিকভাবে তা কমতে থাকে। এতে অনেকটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নীতি-নির্ধারকরা। তারা বলছেন, যে পরিমাণ রিজার্ভ বিদ্যমান তার মধ্যে ৭.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) হিসেবে। যা রিজার্ভের বাইরে হিসেবে গণ্য করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

সূত্রমতে, বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমাতে ইতোমধ্যে নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প বাতিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, নতুন রাস্তা আর নয়। বরং যেসব রাস্তা তৈরি আছে সেগুলোর সংস্কার করতে হবে। তাছাড়া ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও স্থগিত রাখা হবে বলে জানাচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

করোনা মহামারির শুরুতে দেশে কম অগ্রাধিকার, মাঝারি অগ্রাধিকার এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো বিভাজিত করা হয়েছিল। এতে কম অগ্রাধিকারের তালিকায় প্রায় ২৪৭টি প্রকল্পে অর্থ ব্যয় স্থগিত করা হয় করোনাকালে। এর মধ্যে মাঝারি অগ্রাধিকার প্রকল্পে শর্তসাপেক্ষে মোট বরাদ্দের ৫০ শতাংশ ব্যায়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকা পর্যালোচনা করেই প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন তালিকা তৈরি করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, প্রকল্পগুলো আসলে বাতিল করা হচ্ছে না। শুধু বাস্তবায়নের সময় পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রী জানান, যেসব প্রকল্প এখনই বাস্তবায়ন করা না হলে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, সেগুলো পরে বাস্তবায়ন করবো।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন