শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঁজিবাজারে মন্দার হাওয়া, মুখ ফেরাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজারে মন্দার হাওয়া
  • ৫৪ ভাগ কোম্পানির দর পতন, উত্থান ২৯
  • সেরা ডিএসইতে বেক্সিমকো, সিএসইতে ওরিয়ন ফার্মা

কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এ ধরনের কমাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে পুঁজিবাজার থেকে দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করছেন তারা

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোনোভাবেই লেনদেন খড়া থেকে বের হতে পারছে না। মন্দায় কবলে তলিয়ে যাচ্ছে ডিএসইর লেনদেন। কমছে সব ধরনের সূচক সহ বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। দীর্ঘ মন্দায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতি অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। ফলে পুঁজিবাজার বিমুখ হচ্ছেন অনেকেই বলে জানান বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।

এদিন লেনদেনসহ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর মন্দায় অস্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, চলতি বছরের শুরুতে উত্থানের সুবাতাশ ছিল। কিন্তু দিন বদলে উত্থান হারিয়ে পতনে চলে এসেছে। কারনবিহীন এ ধরনের মন্দা অনুসন্ধান জরুরী হয়ে পড়েছে।

মতিঝিল পাড়ায় একাধিক সিকিউরিটিজ হাউজ সূত্রমতে, পুঁজিবাজার মন্দায় পুঁজি হারানোর বৃত্ত আরো বাড়বে। কেন বাড়বে, নেই তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখা। এসব অহেতুক কথাবার্তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ চান তারা। মন্দার প্রসঙ্গে একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলেন, রেগুলেটরদের সব প্রত্যাশার উল্টো গতিতে পুঁজিবাজার। তাদের নেওয়া পুঁজিবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন গতি সুফল বয়ে আনছে না। টানা মন্দা লেনদেনে পুঁজি হারাচ্ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

হঠাৎ করেই চলতি বছরের গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজার কোটি টাকায় লেনদেন ওঠলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। পরের কার্যদিবস থেকে ফের হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছিল। লেনদেন কমে ৬শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ মার্চ হাজার কোটি টাকা ঘরে চলে এসেছিল। পরের দিন লেনদেন ফের হাজার কোটি টাকার নিচে। ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৫ মার্চ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন ফিরে। সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।

আরও পড়ুনঃ  নারিকেলের ছোবড়ায় বড় ব্যবসা

পরেরদিন লেনদেন ৮শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান ছিল। পরের দুই কার্যদিবস লেনদেন ৯শ কোটি টাকার ঘরে থাকলেও বুধবার ৮শ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছিল। পরেরদিন বৃহস্পতিবার লেনদেন এগারশ কোটি টাকার ঘরে ওঠে এসেছিল। এরপর গত রবিবার লেনদেন ৮শ কোটি টাকা, সোমবার ৬শ কোটি টাকা, মঙ্গলবার ৫শ কোটি টাকা, বুধবার ৪শ কোটি টাকা এবং বৃহস্পতিবার ৫শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। চলতি সপ্তাহে কিছুটা বেড়ে রবিবার ৬শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। এরপর গত সোমবার ও গত মঙ্গলবার লেনদেন কমে সাড়ে ৫শ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছিল। এরপর সেখান থেকে আরো কমে লেনদেন গতকাল বুধবার ৫২৯ কোটি টাকায় অবস্থান করেছে।

পুঁজিবাজারে (ডিএসই ও সিএসই) এদিন ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৪৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং সিএসইর ৬০ দশমিক ৫১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারে ১৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং সিএসইর ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এ ধরনের কমাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিন বেশির ভাগে খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এদিন নন ব্যাংকিং আর্থিক, সিরামিক, সিমেন্ট, খাদ্য আনুষঙ্গিক, জ্বালানি শক্তি, বিমা, আইটি, পেপার এবং চামড়া খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এদিন ব্যাংক, পাট, ওযুধ রসায়ন এবং টেলিকম খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়। এদিন বস্ত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফান্ড, বিবিধ, সেবা আবাসন এবং ভ্রমন অবসর খাতের কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান-পতনে রয়েছে মিশ্রাবস্থা। কারনবিহীন পুঁজিবাজারের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর এ ধরনের হ্রাস বাঁকা চোখে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।

আরও পড়ুনঃ  অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সমন্বিত পদক্ষেপ

ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৫২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৫৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৩০টির বা ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ, কমেছে ১৮৫টির বা ৪৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং পরিবর্তন হয়নি ৬৫টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৮৪ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৪ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৪৪০ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৪৭ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে।

অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এদিন লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৬৫টির বা ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, কমেছে ১৬৪টির বা ৬০ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং পরিবর্তন হয়নি ৪২টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৬৬ দশমিক ৯০ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৪৩ দশমিক ২৩ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১০ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৪১ দশমিক ৪১ পয়েন্টে, ১৪ হাজার ৫৫ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৬১৯ দশমিক ২৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২২৬ দশমিক ৯২ পয়েন্টে।

আরও পড়ুনঃ  সমুদ্র তলদেশ কর্তৃপক্ষের সদস্য হলো বাংলাদেশ

মন্দার এদিনে ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। অপরদিকে সিএসইতে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে ডিএসইতে বেক্সিমকো এবং সিএসইতে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকো ৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এছাড়া এদিন সিএসইতে ওরিয়ন ফার্মা ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সোনালী পেপার ৩০ কোটি ৯১ লাখ টাকা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ২১ কোটি ১০ লাখ টাকা, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স ১৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মা ১৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, জিবিবি পাওয়ার ৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বিডি ল্যাম্পস ৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

এছাড়া এদিন সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিলভা ফার্মা ৯৪ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ৮৪ লাখ টাকা, বিএসআরএম ৭৫ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স ৭৪ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৭২ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মা ৭২ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৫১ লাখ টাকা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ৫০ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন