বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে কৃষকের বোবাকান্না

হাওরে কৃষকের বোবাকান্না

গত কয়েকদিন অব্যাহতভাবে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, পুরাতন সুরমা, যাদুকাটা, পাটলাই নদীসহ ছোট বড় সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে হাওরের বোরো ফসল। বাঁধের কাজ দেরিতে শেষ হওয়ায় পানির চাপে অনেক বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। অসময়ে হাওরে পানি প্রবেশ করায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বোরো চাষিদের মাঝে। হাওরে পানি প্রবেশ প্রতিরোধে রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তারা। অনেক হাওরের কাঁচা ধান কাটছেন কৃষকেরা।

গত শনিবার সকালে টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি হাওরে পানি প্রবেশ করে ২৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এরপর এক এক করে অনেক হাওরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। বাঁধের কাজ শুরু এবং শেষ সময়মত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা। হাওরের কৃষকেরা মনে করছেন ফসল সুরক্ষার জন্য সরকারের দেওয়া মোটা অঙ্কের বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। পিআইসি গঠন থেকে শুরু করে বাঁধের কাজে অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠন অনিয়মিত দুর্নীতির অভিযোগ জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। শনিবার সকালে নজরখালি বাঁধ ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঢুকতে শুরু করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি। চোখের সামনেই পানির নিচে তলিয়ে যায় কৃষকের বছরের একটিমাত্র ফসল বোরো ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২০ হাজার একর জমির ফসল। বাঁধ ভেঙে অসময়ে আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হাওরপাড়ের ৮২টি গ্রামের কৃষক।

আরও পড়ুনঃ  সম্ভাবনার হোটেলখাতে শঙ্কা

জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের ১০টি বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বোরো চাষিরা। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, বিশ্বম্ভপুর, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, তাহিরপুর উপজেলার অনেক বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক হাওরে পানি প্রবেশ করছে। ২০১৭ সালের হাওর বিপর্যয়ের সময়ও শুরুর দিকে নজরখালি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গিয়েছিল টাঙ্গুয়ার হাওরের বোরো ধান। অতীতের এমন বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা থাকার পরও নজরখালি বাঁধের জন্য অপ্রতুল বরাদ্দ দেয় স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে অসময়ে বাঁধ নির্মাণ করে দায় সারেন তারা।

এদিকে, স্থানীয়রা জানায়, দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের পাউবোর তুফানখালি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ২০১৭ সালে এ বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গিয়েছিল বরাম হাওরের বোরো ফসল। কুলঞ্জ ইউনিয়নের ২৮ নম্বর পিআইসিন বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান গাওরের আনন্দনগর গ্রামের বাঁধ দেবে গেছে। এ বাঁধ নতুন করে সংস্কার করছেন পিআইসির লোকজন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় চারটি  বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সদর উপজেলার কাংলার হাওরে সুইচ গেইটের উপর দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। পাহাড়িডলে ইতিমধ্যে এ হাওরের একটি অংশের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বাঁধ নির্মাণে সরকার বিপুল বরাদ্দ দিয়েছে। তবে অনেক বাঁধের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় সময়মতো শেষ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে বাঁধগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। আমরা সবাইকে বলেছি, যার যার অবস্থান থেকে বাঁধ মেরামতে এগিয়ে আসতে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আগাম বন্যা আসলে কেবল বাঁধ দিয়ে ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করার থাকে না। এর জন্য নদী উৎসমুখ থেকে মেঘনা পর্যন্ত প্রতিটি নদ-নদী খনন করা জরুরি। উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে সোয়া ২ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বোরো ধান। এ ধানের সুরক্ষায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার ১১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন