শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়ায় বিক্ষোভ

আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়ায় বিক্ষোভ

রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা কারারুদ্ধ আলেক্সাই নাভালনির বিরুদ্ধে চলমান এক মামলার যখন শুনানি চলছিল তখন ইউক্রেনে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছিল রুশ সেনারা। তার আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনির্ধারিত এক টিভি অনুষ্ঠানে ইউক্রেনে বিশেষ অভিযান পরিচালনের পক্ষে তার সমর্থনও ঘোষণা করেছেন। ঠিক এমন একটা মুহূর্তেই কারারুদ্ধ আলেক্সাই নাভালনি তার মামলার শুনানির ফাঁকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রসঙ্গটি নিয়ে আসেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান নাভালনি।

আদালতে তার মামলার শুনানির সময় ইউক্রেন নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের নীতির তীব্র সমালোচনা করেন নাভালনি। বলেন, আমি যুদ্ধের পক্ষে নই, একেবারেই বিরুদ্ধে। আমি মনে করি, রাশিয়ার সমস্যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার জন্যই এই যুদ্ধ সাজানো হয়েছে। এটা রাশিয়াকে বিপুল দারিদ্রের দিকেই নিয়ে যাবে।

ইউক্রেন আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নাভালনি আদালতকে বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেটা মূলত রুশ নাগরিকদের ওপর চালানো লুটপাট ঢাকার জন্য। এইক সঙ্গে তাদের মনোযোগ অর্থনৈতিক পতনসহ দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য। শুনানিতে নাভালনি আরো বলেন, আমি মনে করি ডাকাত ও চোররাই এই যুদ্ধ শুরু করেছে। এই অপরাধী চোর প্রশাসনের সঙ্গে যুদ্ধ করতেই আমি রাজনীতিতে গিয়েছিলাম।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, বিরোধীদলীয় নেতা নাভালনি কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কড়া সমালোচক। এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। তার মধ্যে দুর্নীতি, প্রতারণা ছাড়াও আদালত অবমাননার বহুমুখী অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বেশ কিছু মামলা চলমান।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের অধীনে আসতে চায় 'মেঘালয়ের ৪ গ্রাম'

গত ২০১৭ সালের জুনের প্রথমভাবে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন নাভালনি। তার আগেই তাকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তবে বিরোধীদলের নেতাকে আটকের পরই অবশ্য মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গসহ বিভিন্ন শহরে বড় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিরোধীরা। এসব সমাবেশ থেকে নাভালনি সমর্থক কয়েকশ জনকে আটক করা হয়।

সেই ঘটনার পর থেকে কারারুদ্ধ হয়ে আছেন নাভালনি। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা চলমান, সেগুলো প্রমাণিত হলে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন তিনি। সেই ঘটনার প্রায় চার বছর পর রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে আবারো বড় বিক্ষোভ দেখা গেছে। তবে এবারের প্রেক্ষপটটা ভিন্ন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব সমাবেশ আর বিক্ষোভের ভিডিও আর ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সেসব ছবি আর ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষের হাতে ‘যুদ্ধকে না বলুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড। তারা রাস্তায় মিছিল করছে। কিছু প্ল্যাকার্ডে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়েছে।

এমনকি রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভবনের সামনের গেটে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে ‘সে নো টু ওয়ার’ লেখা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হচ্ছে, ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মস্কোর পুসকিন স্কয়ারে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।  সেন্ট পিটার্সাবার্গে বিক্ষোভ করেছেন প্রায় এক হাজার মানুষ।

এদিকে, বিরোধী দলের সমাবেশে গ্রেপ্তারের ওপর নজর রাখে রাশিয়ায় এরকম একটি সংগঠনের নাম ওভিডি-ইনফো। তারা বলছে, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ৯০০ জনকে আর সেন্ট পিটার্সবার্গে ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় ৭৫৩ বাংলাদেশির মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশে

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ইউক্রেনে রুশ সেনাদের আক্রমণ শুরু করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিরোধীদলীয় কর্মীরা জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান তাতে। অন্যদিকে আবার, রাশিয়ার বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী লেভ পোনোমাভিভ একটি পিটিশন দায়েরের ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাতে দেড় লাখের বেশি স্বাক্ষর করা হয়। দিনে শেষে তা কয়েক লাখে গিয়ে পৌঁছে।

আবার রাশিয়ায় কর্মরত কয়েকশ সাংবাদিক আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা একটা খোলা চিঠিতে আগ্রসানের বিরুদ্ধে সই করেছেন। ঠিক একইরকম উদ্যোগে স্বাক্ষর করেছেন প্রায় কয়েকশত বিজ্ঞানী। আরেকটি খোলা চিঠিতে সই করেছেন মস্কোসহ অন্যান্য শহরের ১৯৪ জন পৌরসভার সদস্য।

মস্কোয় পুশকিন স্কোয়ারের চারপাশে হাজারো কণ্ঠে ‘যুদ্ধ নয়’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। রাশিয়ার যেসব পরিবারের সদস্যরা ইউক্রেনে থাকেন তারাই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বেশি অগ্রসর। তবে অনেকেই বলছেন, বিরোধীদলীয় কর্মীরা রাস্তায় নামার জন্য জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছেন বিভিন্নভাবে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, রাশিয়ার বাইরেও বিক্ষোভ চলছে বহু দেশে। মানবাধিকার কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষও তাতে অংশ নিয়েছেন। তাদের একটা দাবি যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে শত শত বিক্ষোভকারীকে দেখা গেছে। তারা শরীরে ইউক্রেনের পতাকা জড়িয়ে জাতিসংঘের রুশ মিশনের দিকে মিছিল করেছে।

সর্বশেষ তথ্যমতে, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ঠেকাতে আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিনে রাশিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়েছে। শুক্রবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক টুইট বার্তায় এই তথ্য নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, রুশ সৈন্যরা এখন কিয়েভে। তবে ইউক্রেনের সৈন্যরা রুশ দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই গড়ে তুলেছে।

আরও পড়ুনঃ  খাসির মাংসের কেজি ৯০০ টাকা

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শত্রুরা এখন কিয়েভের ওবোলোন জেলায় পৌঁছেছে। রাজধানী কিয়েভের সংসদ ভবন এলাকা থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ওবোলোন শহর।

সংবাদটি শেয়ার করুন