রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবুজের চাদরে ঢাকা যমুনা চর

সবুজের চাদরে ঢাকা যমুনা চর

টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা। বর্ষায় দু’কূল ভাসিয়ে নেয়া যমুনা শুষ্ক মৌসুমে ধু-ধু বালুচর। যমুনার বুকে জেগে ওঠা বালুচর অবহেলিত মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন। সেই বালুচরে এখন বাদাম চাষের সমাহার। সবুজ চারাগাছে মনে হয় সবুজের চাদরে ঢেকে আছে যমুনা চর। যমুনার ভাঙাগড়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা মানুষগুলো বালুচরে দীর্ঘদিন ধরে চিনা বাদামের চাষ করে আসছে। চলতি মৌসুমে বাদামের দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক অনেকটাই উৎফল্ল। তাই চরের কৃষক বাদামকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন গুপ্তধন। এছাড়া অন্যান্য উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাতেও বাদাম চাষ হচ্ছে।

যমুনার চর ঘুরে দেখা যায়, যমুনা নদীর বুকজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় বালুচর। আর এসব বালুচরে মাইলের পর মাইল চাষ হচ্ছে চিনা বাদাম। সাদা বালুর জমিনে সবুজ আর সবুজে ছেয়ে গেছে লতানো বাদামের গাছে। প্রতিটি বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসে থোকা থোকা সোনালী রঙের চিনা বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলসহ ১২টি উপজেলায় ২হাজার ২শ’ ১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল সদরে ৩৭৫ হেক্টর, ভুঞাপুরে ১৭২২ হেক্টর, গোপালপুরে ২৮ হেক্টর, নাগরপুরে ৭ হেক্টর, বাসাইলে ২০হেক্টর,কালিহাতীতে ২০ হেক্টর, ঘাটাইলে ৯ হেক্টও, সখীপুওে ৫ হেক্টর, দেলদুয়াওে ১৪ হেক্টর ও মির্জাপুরে ১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে যমুনা তীরে। বাদাম চাষীরা লাভবান হওয়ার কথাও স্বীকার করলেন চাষীরা। বর্তমানে বাদাম তোলার মৌসুম। কোথাও বাদাম তোলা হচ্ছে। আবার কোথাও বাদামের চারা পরিপক্ক হয়েছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি চরাঞ্চলের চাষীরা বাদাম চারা পরিচর্যা বাব াদাম তোলার কাজ করছে। পরিবারের নারী ও শিশুরাও এ কাজে সহযোগিতা করছে।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্বে কমে দেশে বাড়ে

ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা এলাকার কৃষক আজমত আলী জানান, যমুনা চরের বালুমাটি চিনা বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ বছর বাদাম চাষ করে অনেক লাভ হবো বলে আশা করছি। প্রতি মণ কাঁচা বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় এবং প্রতি মণ শুকনা বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকায়। এবার ফলন ভালো হওয়ায় এক বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ বাদাম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদামের ফলনও হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে।

স্থানীয় কৃষক আবু তালেব পরামানিক বলেন ১২০ থেকে ১৫০ দিনের মধ্যে বাদাম তোলা যায়। ৬৬ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ করেছেন তিনি। ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যে বাদাম হয়েছে তাতে খরচ বাদে ২৫/৩০ হাজার টাকা লাভ থাকবে। তিনি আরও বলেন বাদাম গাছগুলো গো-খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করেন চাষীরা। এতেও ৫/১০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। আলম বলেন, আমাদের বাদাম চাষের শুরুতে অর্থ সংকটের কারণে বেশী জায়গা জুড়ে আবাদ করতে পারি না। বপনের সময় সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা পেলে আমরা বাদাম চাষ আরও বেশী করতে পারবো। তবে অন্য আবাদের চেয়ে বাদাম চাষ লাভজনক।

হোসেন মিয়া জানান, বালু মাটিতে অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমপরিমাণ লাভ হয় না। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে চিনা বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চরাঞ্চলের আমরা সবাই বাদাম চাষ করেছি। বাদাম রোপণের পর অন্য ফসলে ন্যায় কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার। বীজ রোপণ আর পরিপক্ব বাদাম উঠানোর শ্রমিক খরচ ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। বালুচরের এ ফসলটি আমাদের বেঁচে থাকার মাধ্যম।

আরও পড়ুনঃ  চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতে ঋণ

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, আমার কাকুয়া ইউনিয়টি যমুনা নদীর পাড়ে। এ ইউনিয়নের বেশীর ভাগ এলাকা নদীগর্ভে। কিছু জায়গায় চর জেগে উঠায় নদী পাড়ের মানুষগুলো বাদাম চাষ করে থাকে। চরাঞ্চলে বেশির ভাগ বারি চিনাবাদাম-৭ ও ৮এর চাষ হচ্ছে। এছাড়াও বিনা-৪ ও বিজি-২ এর ফলন করে থাকে। তিনি মনে করেন, চাষিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিলে চাষিরা বাদাম চাষ করতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.আহসানুল বাসার বলেন, টাঙ্গাইল জেলায় চলতি বছরে ২২০১ হেক্টর জায়গা বাদাম চাষ করা হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ৪ হাজার ৮০১ মে.টন ফলন পাবেন বলে আশাবাদী। এছাড়া টাঙ্গাইলে বড় অংশ বাদাম চাষের জন্য যমুনা চর। এ চরে কৃষকরা বাদামের লাভ পাওয়ায় প্রতিবছর বাদাম চাষে জায়গা বৃদ্ধি করছে। এছাড়াও আমরা বাদাম চাষীদের প্রতিবছর বীজ দিয়ে থাকি।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন