শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লকডাউনে সহায়তাবঞ্চিত ৯৯ ভাগ শ্রমিক

বিলস জরিপ প্রতিবেদন

২০২১ সালের লকডাইনে পরিবহন, হোটেল-রোস্তোরাঁ ও দোকানপাটের শ্রমিকদের ৯৯ ভাগই সরকারি সহায়তা পায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস। মাত্র ১ শতাংশেরও কম শ্রমিকরা কম দামে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে। করোনা মহামারীকালে লকডাউনে ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকান-পাট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে চাকরি হারিয়েছেন ৮৭ শতাংশ শ্রমিক। চাকরি হারানো শ্রমিকদের ৭ ভাগ এখনো বেকার। গড়ে তাদের আয় কমেছে ৮ ভাগ বলে জানায় বিলস।

সংস্থাটির ‘ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকানপাট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের উপর সাম্প্রতিক লকডাউনের প্রভাব নিরূপণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির বিলস্ সেমিনার হলে আয়োজিত গবেষণার ফল নিয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন বিলস্ উপ-পরিচালক (গবেষণা) মো. মনিরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বিলস্ ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন, পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ এবং নাজমা ইয়াসমীন প্রমুখ।

গবেষণায় বলা হয়, লকডাউনে (৫ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত) চাকরি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৭ শতাংশ শ্রমিক। পরিবহন খাতের ৯৫, দোকানপাটের ৮৩, হোটেল-রেস্তোরাঁর ৮২ শতাংশ। লকডাউন পরবর্তীতে ৯৩ শতাংশ শ্রমিক চাকরিতে পুনর্বহাল হলেও ৭ শতাংশ এখনো বেকার। তবে লকডাউনে খণ্ডকালীন শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বেড়েছিলো ২১৫ শতাংশ। কার্যদিবস কমেছিল ৭৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৯২ শতাংশ কার্যদিবস কমেছে পরিবহন খাতে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে অবশ্য কাজের চাপ বেড়েছে, কার্যদিবস এবং কর্মঘণ্টা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, লকডাউনে তিনটি খাতের শ্রমিকদের আয় গড়ে ৮১ শতাংশ কমেছে। তার মধ্যে পরিবহনে ৯৬ ও হোটেল-রেস্তোরাঁর ৮৩ শতাংশ। লকডাউনের আগে মাসিক গড় আয় ছিল ১৩ হাজার ৫৭৮ টাকা সেটা লকডাউন সময়ে নেমে এসেছিল ২ হাজার ৫২৪ টাকায় এবং লকডাউন পরবর্তী সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫২৯ টাকা। অর্থাৎ লকডাউন পরবর্তী সময়েও ৮ শতাংশ আয়ের ঘাটতি থাকছে।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

লকডাউনে শ্রমিকদের পরিবারে আয় এবং ব্যয়ের ঘাটতি ছিল প্রায় ৭৭ শতাংশ, সর্বোচ্চ ৯৭ শতাংশ পরিবহন খাতের এবং সর্বনিম্ন ৪৬ শতাংশ রয়েছে খুচরা দোকান বিক্রেতা খাতের শ্রমিক পরিবারের। ২০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার সম্পত্তি বিক্রয়, খাবার কমিয়ে দেওয়া এবং সন্তানদের কাজে পাঠানোর মাধ্যমে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। এছাড়া ৮০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার ধার করে এবং সঞ্চয় কমিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করছেন। লকাডাউন পরবর্তী সময়ে সঞ্চয় কমেছে ৬৪ শতাংশ এবং সঞ্চয়কারীর সংখ্যা কমেছে ৫০ শতাংশ।

এছাড়া লকডাইনে উল্লেখিত তিনটি খাতের শ্রমিকদের মাত্র ১ শতাংশেরও নিচে সরকারি বিভিন্ন সহায়তা পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে কম মূল্যে খাদ্য সহায়তা এবং নগদ টাকা। গবেষণা অনুযায়ী ৩৬ শতাংশ শ্রমিক কোভিডের টিকা নিয়েছেন এবং ৬৪ শতাংশ শ্রমিক এখনো টিকার আওতার বাহিরে রয়েছেন।

এসব সমস্যা সমাধানে শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয় বিলসের জরিপে। তার মধ্যে ১. সময় বেসরকারিখাতে কর্মরত শ্রমিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেস প্রণয়ন করা। ২. একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনার আওতায় বেসরকারিখাতের শ্রমিকদের ক্রমান্বয়ে পেশা উল্লেখসহ পরিচয়পত্র প্রদান। ৩. দুর্যোগকালীন বেসরকারিখাতে কর্মরত শ্রমিকদের সহায়তার জন্য একটি সঠিক ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রণয়ন করা। ৪. অগ্রাধিকারভিত্তিতে বেসরকারিখাতের শ্রমিকদের করোনা টিকা প্রদান নিশ্চিত করা। ৫. শ্রমিকদের সামাজিকভাবে সুরক্ষার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বীমা ব্যবস্থার প্রবর্তন করাসহ করোনা মহামারীর বাস্তবতায় পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং দোকান বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন