করোনার ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে যেতে নিজেদের কর্মীর শরীরেই ‘প্রি-টেস্ট’ করছে চীনের একটি ফার্ম। সরকারি অনুমোদনের আগেই প্রতিষ্ঠানের এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ের কর্মীর শরীরে ভ্যাকসিন দিচ্ছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি সিনোফার্ম।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল পাবলিক হেলথ ল এক্সপার্ট লরেন্স গোস্টিন বলেন, সবার আগে ভ্যাকসিন আনার এই রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা অতীতে চাঁদে যাওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চলা প্রতিযোগিতার চেয়ে কম নয়।
তবে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চীন বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত চীনে মানুষের শরীরে নানা পর্যায়ে প্রায় ২৪টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের মধ্যে আটটির পরীক্ষা চালানো হয়েছে। যা পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। তাছাড়া সিনোফার্ম ও আরও একটি চীনা কোম্পানি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, তারা টেস্টিংয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক অনুমোদন নেওয়ার আগেই ৩০ জন ‘বিশেষ স্বেচ্ছাসেবী’র ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগের দাবি তুলেছে সিনোফার্ম। এভাবে মানব শরীর বেছে নেওয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা পর্যবেক্ষকদের তীব্র আপত্তির মধ্যেও তারা এই পরীক্ষা চালিয়েছে। ‘আত্মবিসর্জনের পরিচায়ক’ হিসেবে অভিহিত করে, স্যুট-টাই পরিহিত ৭ জনের ছবি প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি, যাদের মধ্যে বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টির এক কর্মকর্তাও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’-এ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইয়ানজং হুয়াং বলেছেন, স্বেচ্ছায় আত্মবিসর্জনের এই আইডিয়া চীনের ক্ষেত্রে একেবারে প্রত্যাশিত ঘটনা। তবে করপোরেট ব্যক্তিত্ব ও সরকারি কর্মকর্তারা এ রকম পরীক্ষায় নিজেদের উৎসর্গ করলে সেটি অন্য কর্মীদেরও একই কাজ করার চাপে ফেলে দিতে পারে। আর তা ঘটলে অবশ্যই স্বেচ্ছাবৃত্তির ব্যত্যয় ঘটবে, যা কি না আধুনিক চিকিৎসা নৈতিকতার ওপর একটি আঘাতের সামিল।
এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে নারাজ সিনোফার্ম বর্তমানে দুটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে। অফিসিয়াল উইচ্যাট অ্যাকাউন্টে কোম্পানিটির পক্ষে জানানো হয়, মার্চের শেষে ‘প্রি-টেস্টে’ এর পর যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিনটি বাজারে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস