বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে নিয়ম করে গাছ লাগান নাগরিকরা। এমনকি এমন এক দেশ আছে যেখানে ছাত্র ছাত্রীকে গাছ লাগাতে হয় বাধ্যতামূলক। না হলে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে না তারা। শুধু গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়। সেই গাছের পরিচর্যাও করতে হবে তাকেই।
ফিলিপাইনে এমন আইন আছে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যস্থার নিয়মানুযায়ী ৪ বছরের অনার্স শেষ করে ১ বছরের মাস্টার্স শেষ করে গ্রাজুয়েট হতে হয়। তবে বিশ্বের এমন একটি দেশ আছে যেখানে গ্রাজুয়েট হতে লাগাতে হয় গাছ। পরিবেশ রক্ষায় এমনই এক আইন তৈরি করেছে ফিলিপাইন। যেখানে একজন শির্ক্ষার্থীকে তার গ্রাজুয়েশন শেষ করতে অন্তত ১০টি গাছ লাগাতে হবে। তারপরই সে পাবে তার কাঙ্ক্ষিত সার্টিফিকেট।
এদিকে উল্টো চিত্র বাংলাদেশে! ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’ স্লোগান সবাই শুধু মুখেই আওড়াচ্ছেন। শুধু কাগজে আর টকশোর বিষয়ে আছে এই কথা। কিন্তু বাস্তবে গাছ কেটে বন উজার করছেন সবাই। বনায়ন কমিয়ে নগরায়ণ গড়ে তুলছেন আধুনিক সভ্যতার মানুষ। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহে সবাই গাছের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে ভালোভাবেই।
![](https://dainikanandabazar.com/wp-content/uploads/2024/06/tree-20240605125925.jpg)
অন্যদিকে ফিলিপাইন এক বছরে ১৭ কোটি ৫ লাখ গাছ রোপনের জন্য অভিনব এক আইন পাস করেছে। ২০১৯ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি ‘গ্র্যাজুয়েশন লিগ্যাসি ফর দ্য এনভায়রনমেন্ট অ্যাক্ট’ চালু করেছে। এই আইনে কোনো শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করতে হলে কমপক্ষে দশটি করে গাছ লাগাতে হবে। যে কোনো স্থানেই এসব বৃক্ষরোপণ করা যাবে। বিশেষ করে বন, ম্যানগ্রোভ এবং সংরক্ষিত এলাকা, বাড়ির চারপাশ, বেসামরিক এবং সামরিক সংরক্ষণ, শহুরে এলাকা, নিষ্ক্রিয় এবং পরিত্যক্ত খনি সাইট, অন্যান্য উপযুক্ত জমি। এমনকি গাছগুলো হতে হবে স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে মানানসই।
পরিবেশ রক্ষায় ওই বিল উত্থাপন করেছিলেন দেশটির জনপ্রতিনিধি গেরি আলেজানো। বিলের নোটে তিনি লিখেছেন, আমরা যখন শিক্ষার্থীদের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যকর বাস্তুসংস্থান নিশ্চিতের কথা বলছি, তখন এর জন্য তাদের অবদান না রাখার কোনো কারণ নেই। এর মাধ্যমে বছরে ১৭ কোটি ৫ লাখ বৃক্ষরোপণ হবে। নতুন এই আইনানুযায়ী, দেশটির শিক্ষা বিভাগ শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণ বাস্তবায়ন করবে। তাছাড়া, পরিবেশ ও কৃষি বিভাগ গাছের পরিচর্যা, বীজ সরবারহ এবং স্থান নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফিলিপাইনে প্রতিবছর প্রায় ১২ মিলিয়ন শিক্ষার্থী প্রাথমিক, ৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক এবং ৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে। আইনটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর ১৭৫ মিলিয়ন নতুন গাছ লাগানো সম্ভব হবে। এভাবে এক প্রজন্মের মধ্যেই ৫২৫ বিলিয়ন গাছ লাগানো যাবে। এসব লাগানো গাছের বেঁচে থাকার হার যদি ১০ শতাংশও হয়, তবুও তা ৫২৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। এভাবে সেদেশের তরুণরা জলবায়ু পরিবর্তনে মোকাবেলা করতে পারবে। সেইসঙ্গে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতে পারবে। ফিলিপাইন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৭ হাজার ৬৪১টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। একসময় এই দ্বীপজুড়ে বন উজাড় করে নানান স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ গাছ কাটার কারণে পরিবেশগত সমস্যা হয় দেশটিতে। সে কারণেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশটিতে। সূত্র: ফোর্বস