শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শততম দিন

ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত ২৫ হাজার ছাড়ালো

ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত ২৫ হাজার ছাড়ালো

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের আজ ১০০তম দিনে মৃত্যু ২৫ হাজার ৩৫৫ জন ছাড়িয়ে গেছে। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ১০০তম দিনে এসেও গাজা সংঘর্ষ বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

গাজায় শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের মতো নয়। এবারের হামলায় গাজার ভিটে-মাটি ও হাজার বছরের ইতিহাস ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ধ্বংসাক্তক ও রক্তক্ষয়ী ইসরায়েলি আগ্রাসন। ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহতা দেখে ফরাসি ইতিহাসবিদ জাঁ-পিয়ের ফিলিউয়ের এমনভাবেই তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।

ইসরায়েলি আগ্রাসনের চিত্র তুলে ধরার জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং সাহায্য গোষ্ঠী তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেই বিধ্বংসী চিত্র হলো…

ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত: গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৩৫৫ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শুধু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ২৪ হাজার ৫৫ জন। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজায়ই নিহত হয়েছেন ২৩ হাজার ৭০৮ জন। বাকি ৩৪৭ জন নিহত হয়েছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে। অপর দিকে হামাসের হামলায় মাত্র এক হাজার ৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ: গাজায় হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি সমানতালে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েলি দখলদাররা। গাজা বিমান হামলা চালিয়ে ৪৫ থেকে ৫৬ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনীরা। আবাসিক ভবন ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। হাসপাতালগুলোও ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী। গাজার ৩৬টি হাসপাতালে মধ্যে ১৫টিই ধ্বংস করেছে তারা।

আরও পড়ুনঃ  ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা

গাজার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ, গির্জা ও জাদুঘর ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। এসব কিছু ধ্বংস করে চোখের সামনে থেকে মানবতার স্মৃতি মুছে ফেলছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার ১৪২টি মসজিদ ধ্বংস করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে বৃহত্তম ও প্রাচীনতম ওমরি মসজিদ। গাজায় অবস্থিত তিনটি চার্চ ধ্বংস করেছে ইসরায়েলিরা। দুই হাজার বছরের পুরোনো সেন্ট পরফিরাস চার্চ ধ্বংস করেছে তারা। পঞ্চম শতাব্দীতে তৈরি এ চার্চে আশ্রয় নিয়েছিলেন শত শত খ্রিষ্টান ফিলিস্তিনি নাগরিক।

হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিস্থিতিতে পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি অনাহারে রয়েছেন। ঘর-বাড়ি হারা এই অনাহারী মানুষগুলো স্কুলে ভবনে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালায় ইসরায়েলিরা। গাজার প্রায় ৬৯ শতাংশ স্কুল ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীন রোমান কবরস্থান ও জাদুঘর কাসার আল বাশা। হামলায় আহতদেকে যাতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ১২১টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনীরা। হাসপাতাল ও স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ছয় লাখ ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে রয়েছে।

এছাড়াও, হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষে ৭৬ হাজার ৪২০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৬৪ হাজার পাঁচজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজায় আহত হয়েছেন ৬০ হাজার পাঁচজন। বাকি চার হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন পশ্চিম তীরে। অপরদিকে এই সংঘর্ষে ১২ হাজার ৪১৫ জন ইসরায়েলি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুই হাজার ৪৯৬ জন ইসরায়েলি সেনা রয়েছেন। যাদের মধ্যে এক হাজার ৮৫ জন সেনা স্থল অভিযানে আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  মসজিদে বিমান হামলায় ১১ আফগান শিশু নিহত

গাজায় বসবাসরত ২৩ লাখের মধ্যে ১৮ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যত হয়েছেন। উত্তর গাজা ও দক্ষিণ গাজার সীমান্ত এলাকা থেকেই প্রায় দুই লাখ ৪৯ হাজার ২৬৩ জন ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরায়েল। শুধু তাই না পশ্চিম তীরে এক হাজার ২০৮ জনকে বাস্তুচ্যুত করেছে দখলদাররা।

গাজায় হামাস-ইসরায়েলি সংঘর্ষে ধর-পাকড়াও: ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করেছিল হামাস। সংঘর্ষের মাঝখানে সাতদিনের যুদ্ধবিরতির সময় ১২১ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস গোষ্ঠী। বলা হয়েছে, এখনও ১৩৬ জন জিম্মি হামাসের হাতে রয়েছেন। বাকি ৩৩ জন জিম্মি মারা গেছেন। অপরদিকে যুদ্ধবিরতির সময় ২৪০ জন ফিলিস্তিনি কারা বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।

হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষে যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার: গাজা আক্রমণে ২৯ হাজার বোমা, গোলাবারুদ ও শেল ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অপর দিকে ইসরায়েলে ১৪ হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। খবর: আল জাজিরা

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন