শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌপথে ইতালি যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুও

নৌপথে ইতালি যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুও

বিপজ্জনক ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের ইউরোপে পৌঁছানোর হার ব্যাপক বেড়েছে। এদিকে গতকাল (রোববার) ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে নৌকাডুবির এক ঘটনায় অন্তত ৫৮ জন অভিবাসীর প্রাণহানি ঘটেছে। উন্নত জীবনের আশায় বিপজ্জনক ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের ইউরোপে পৌঁছানোর মরিয়া চেষ্টা ফুটে উঠেছে রোববারের এই দুর্ঘটনায়। প্রত্যেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার অভিবাসী নানা দুর্যোগ, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের আশায় এই পথ বেছে নেন।

অনেক বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে কোনো রকমে পৌঁছাতে পারলেও কারও কারও ঘটে যায় সলিল সমাধি। যেসব দেশ থেকে অভিবাসীরা ইউরোপে যাওয়ার এই প্রাণঘাতী পথ বেছে নেন, সেসব দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশও। তবে এই অভিবাসীদের সিংহভাগই উত্তর আফ্রিকা থেকে যাত্রা করেন।

অভিবাসীদের বিপজ্জনক সমুদ্রপথ পাড়ি দেওয়ার লাগাম টানার চেষ্টা করে যাচ্ছে ইতালির সরকার। কোন কোন দেশের নাগরিক যাচ্ছেন তার চিত্র নিম্নরুপ। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ইতালিতে অভিবাসীদের পৌঁছানোর শীর্ষ দেশগুলো হল গিনি (১ হাজার ৬৫৪ জন), আইভরিকোস্ট (১ হাজার ৫১১ জন), পাকিস্তান (৯৯৭জন), তিউনিসিয়া (৮৪৬জন), মিসর (৪৯০জন) এবং বাংলাদেশ (৪৪৭ জন)।

গত ২০২২ সালে ইতালিতে পৌঁছানো অভিবাসীদের শীর্ষ দেশের তালিকায় ছিল মিসর (২০ হাজার ৫৪২ জন), তিউনিসিয়া (১৮ হাজার ১৪৮ জন), বাংলাদেশ (১৪ হাজার ৯৮২ জন), সিরিয়া (৮ হাজার ৫৯৪ জন) এবং আফগানিস্তান (৭ হাজার ২৪১ জন)।

২০১৪ সাল থেকে মধ্য-ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত অথবা নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের নিখোঁজ অভিবাসী প্রকল্প। অভিবাসীদের প্রাণহানি এবং নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ভূমধ্যসাগরকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পথে পরিণত করেছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরের এই পথে ২২০ জনেরও বেশি অভিবাসী মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আরও পড়ুনঃ  ‘উত্তর কোরিয়ায় একজনও করোনায় আক্রান্ত হননি’

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইতালিতে নৌকায় চেপে পৌঁছেছেন ১৩ হাজার ৬৭ জন অভিবাসী। যা ২০২২ সালের একই সময়ের ৫ হাজার ২৭৩ জন এবং তার আগের বছরের ৪ হাজার ১৫৬ জনের তুলনায় অনেক বেশি। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ইতালিতে পৌঁছানো অভিবাসীদের মধ্যে অন্তত ৮৬১ জন শিশু রয়েছে; যাদের সঙ্গে কোনও অভিভাবক পাওয়া যায়নি। এর আগে, গত বছর মোট এক লাখ ৫ হাজার ১২৯ জন অভিবাসী ইতালিতে পৌঁছান; যা ২০২১ সালের ৬৭ হাজার ৪৭৭ ও তার আগের বছরের ৩৪ হাজার ১৫৪ জনের তুলনায় বেশি। তবে দেশটিতে অভিবাসীদের পৌঁছানোর রেকর্ড হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৪৩৬ জন অভিবাসী ইতালিতে যান। ২০২২ সালে দেশটিতে অভিভাবকহীন শিশু অভিবাসী পৌঁছেছিল ১৩ হাজার ৩৮৬ জন।

২০২২ সালে ৫১ শতাংশ অভিবাসী লিবিয়া থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছান। এছাড়া দেশটিতে ৩১ শতাংশ অভিবাসী তিউনিসিয়া এবং ১৫ শতাংশ তুরস্ক থেকে যান। একই বছর ইতালিতে পৌঁছানো মোট অভিবাসীদের মধ্যে বাকিরা লেবানন, আলজেরিয়া এবং সিরিয়া থেকে যাত্রা করেছিলেন বলে জানায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

আনন্দবাজার/কআ

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন