শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইরানের বিরুদ্ধে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা জারি

ইরানের বিরুদ্ধে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা জারি

হিজাববিরোধী আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করার অভিযোগে ইরানে বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

ইইউ’র প্রভাবশালী সদস্যরাষ্ট্র জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেলিনা বেয়ারবক সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

লুক্সেমবার্গে ইইউ’র সদস্যরাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। সোমবার সেই বৈঠকে যোগ দিতে দেশটির রাজধানী লুক্সেমবার্গ সিটিতে গিয়েছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন দমনের নামে যারা ইরানের নারী, পুরুষ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। এছাড়া দেশটির নৈতিকতা পুলিশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২২ বছরের তরুণী মাশা আমিনি। ঠিকমতো হিজাব না পরা ও গায়ে বোরকা না থাকায় তাকে আটক করা হয়। পুলিশি হেফাজতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয় তাকে। হাসপাতালে ভর্তির চার দিনের মাথায় মৃত্যু হয় মাশা আমিনির। মাশা’র পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ— নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের কারণেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি তার মৃত্যুর জন্য নৈতিকতা পুলিশ সদস্যদের দায়ী করেন পরিবারের সদস্যরা।

হেফাজতে নিয়ে যাওয়া নৈতিকতা পুলিশ সদস্যদের ইতোমধ্যে আইনের আওতায় এনেছে ইরানের ইসলামপন্থী সরকার। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াই মাশার মৃত্যুর কারণ।

১৬ সেপ্টেম্বর মাশার মৃত্যুর দিন থেকেই দ্রুত দেশটির ছোট বড় প্রায় সব শহরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। শুরুতে বিক্ষোভকারীরা ইরানের নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলেও অচিরেই তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে মোড় নেয়। ইরানের ইসলামপন্থী সরকারও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এই বিক্ষোভ দমনের। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি-রাবার বুলেট, জলকামানের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

আরও পড়ুনঃ  ভারতের মণিপুরে বাস দুর্ঘটনায় ১৫ স্কুলশিক্ষার্থী নিহত

ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে নিহত হয়েছেন ২ শতাধিক মানুষ। সম্প্রতি আইএইচআর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করতে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও গ্রেপ্তারের পাশাপাশি গত কিছুদিন ধরে স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদেরও আটক করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির আভাস দিয়েছিলেন। বার্লিনে ১০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যানেলিনা বেয়ারবক জার্মানি ও ইইউ’র পক্ষ থেকে ইরানে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী সরকারকে বিক্ষোভরত জনগণের দাবি মেনে নিয়ে নৈতিকতা পুলিশ বাহিনী বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এই অনুরোধ না রাখা হলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি।

আনন্দবাজার/কআ

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন