বৃহস্পতিবার, ২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুড়ছে ইউরোপ হাসছে রাশিয়া

পুড়ছে ইউরোপ হাসছে রাশিয়া
  • গ্যাস পুড়ছে রাশিয়া, চড়াদামে দিশেহারা ইউরোপ
  • নিঃসৃত কার্বন ডাই-অক্সাইডে বরফ গলছে আর্কটিকে

ইউরোপে জ্বালানির দাম যখন চড়া, তখন বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস নষ্ট করছে রাশিয়া। ফিনল্যান্ডের সীমান্তের কাছে অবস্থিত একটি প্ল্যান্টে প্রতিদিন  প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ গ্যাস পোড়াচ্ছে দেশটি। অসংখ্য এই গ্যাস পোড়ানো নিয়ে প্রচন্ড হতাশ বিজ্ঞান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন গ্যাস পোড়ানোয় নিঃসৃত কার্বন ডাই অক্সাইডের কারণে আর্কটিক বরফ গলে যাওয়ার হার বৃদ্ধি পাবে।

রিস্ট্যাড এনার্জির বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৪ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর-পশ্চিমে পোর্তোভায়ায় নতুন একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) প্ল্যান্টে পোড়ানো হচ্ছে এই গ্যাস। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই গ্যাস আগে জার্মানিতে রপ্তানি করা হতো।

গরমের শুরুতে সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থানরত ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের নজরে বিষয়টি প্রথম আসে। দূর দিগন্তে বিশাল কিছু জ্বালানো হচ্ছে এমনটাই আভাস পান তারা। সমুদ্রের পাদদেশ দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস বহনকারী পাইপলাইন নর্টস্ট্রিম-১ এর শুরুর পয়েন্টের কম্প্রেসার স্টেশন পোর্তোভায়ার নিকটেই অবস্থিত। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে পাইপলাইনটিতে গ্যাস সরবরাহ কমানো হয়েছে। রাশিয়ানদের দাবি প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণেই গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে জার্মানি বলছে পুরোটাই রাশিয়ার রাজনৈতিক চাল।

কিন্তু জুন থেকেই গবেষকরা নর্ডস্ট্রিম প্ল্যান্টটির কাছাকাছি অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি লক্ষ্য করেন। প্রথমে তারা একে প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বাভাবিক প্রজ্বলন ধরে নেন। গ্যাস প্রজ্বলন প্রসেসিং প্ল্যান্টের স্বাভাবিক বিষয়। সাধারণত প্রযুক্তিগত বা নিরাপত্তাজনিত জটিলতায় প্ল্যান্টে গ্যাস পোড়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণে গ্যাস পোড়ানো নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে গবেষকরা।

আরও পড়ুনঃ  বাইডেন ক্ষমতায় আসলে আমেরিকার উপর রাজত্ব করবে চীন : ট্রাম্প

গ্যাস ফ্লেয়ারিং নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ক্যাপটেরিও-র সিইও মার্ক ডেভিস বলেন, এই প্রজ্বলন কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবেই কোনো কাজে তা জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, অপারেটররা প্রায়ই এধরনের গ্যাস ফ্যাসিলিটিগুলো বন্ধ করতে ভয় পায়, কেননা পুনরায় চালু করা আরও বেশি কঠিন ও ব্যয়বহুল হতে পারে। আর সেজন্যই হয়তো এখানে গ্যাসগুলো পোড়ানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আরেকটি দলের মতে, নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইনে যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হতো সেগুলোর ব্যবস্থা করাই রাশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়ার জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম সম্ভবত সেই গ্যাস থেকে নতুন প্ল্যান্টে এলএনজি প্রস্তুত করছে। কিন্তু সম্ভবত সেটা করতে গিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। আর সে কারণেই নিরাপদ বিকল্প হিসেবে গ্যাসগুলো পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে নিশ্চিতভাবে আসল কারণটা বলা না গেলেও রাশিয়ার কাছে যে বিপুল গ্যাসের মজুদ রয়েছে তা পরিষ্কার। সবকিছু ঠিক থাকলে গ্যাসগুলো হয়তো নর্ডস্ট্রিম-১ বা অন্য মাধ্যমে ইউরোপে রপ্তানি হতো। আর তাতে মুহূর্তেই নেমে আসত জ্বালানির দাম।

বিজ্ঞানীরা এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি খরচ করার পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। তবে গবেষকদের মতে, গ্যাসের মূল উপাদান মিথেন নিঃসরণের চেয়ে গ্যাস প্রজ্বলন ভালো কেননা মিথেন বৈষ্ণিক উষ্ণতা বৃদ্ধির শক্তিশালী উপাদান। তবে তারপরও দৈনিক প্রায় ৯ হাজার টনের সমপরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণও প্রকৃতিতে মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, আর্কটিক অক্ষাংশে জ্বালানি পোড়ানোর মূল উদ্বেগের কারণ হচ্ছে এখান থেকে কার্বন নির্গত হয়ে উত্তরের তুষার ও বরফের ওপর গিয়ে জমবে যা আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলাকে আরও ত্বরান্বিত করবে, যার ভুক্তভোগী হবে সমগ্র বিশ্ব।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন