শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে ‘সরকার আমদানি’

পাকিস্তানে ‘সরকার আমদানি’

বিক্ষোভে উত্তাল, পদত্যাগে ইমরানের সব এমপি

অনাস্থা ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকরা। দেশটির অন্তত ৪০টি শহরে বিক্ষোভকারীরা সমবেত হয়েছেন। এরই মধ্যে ‘আমদানি করা’ সরকার ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টার প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন ইমরান খান।

গতকাল সোমবার পিটিআই জ্যেষ্ঠ নেতা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনকে বলেন, ‘আগামী বুধবার থেকে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করব আমরা। দলের প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ হবে পেশোয়ারে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ (গতকাল) থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। দলের সমর্থকদের বিক্ষোভ-সমাবেশ নিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণই সবসময় তাদের নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা করেছে।

এদিকে, প্রবাসী পিটিআই সমর্থকরাও ইমরান খানের পক্ষে বিক্ষোভ করেছেন। টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, পিটিআই সমর্থকরা লন্ডনের হাইড পার্কে জড়ো হয়ে ইমরানের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন। বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য দলের সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘গণতন্ত্রের দাবিতে এবং বিদেশীদের সঙ্গে চক্রান্তে লিপ্ত থাকা কুটিলদের বিরুদ্ধে এত বড় স্বতস্ফূর্ত মিছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে ঘটেনি। আমি মিছিলে অংশ নেওয়া সব পাকিস্তানিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এদিকে দলের সব এমপির সঙ্গে বৈঠক করেন ইমরান। বৈঠকে ইমরান দলীয় এমপিদের উদ্দেশে ইমরান খান বলেন, ‘আমরা কোনো পরিস্থিতিতেই আর জাতীয় পরিষদে অধিবেশনে বসব না। দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, যারা নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে চাপে রাখতে হবে।’

আরও পড়ুনঃ  হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ

‘আর এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে আমরা সবাই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করব।’ বৈঠকে অবশ্য বেশিরভাগ এমপিই প্রথম দিকে ইমরানের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা যুক্তি দেন- যদি পিটিআইয়ের এমপিরা পদত্যাগ করে, সেক্ষেত্রে মাঠ ফাঁকা হয়ে যাবে এবং বিরোধীদের জন্য আরও সুবিধা হবে।’ এই পর্যায়ে ইমরান বলেন, ‘আমি হব পদত্যাগ করা প্রথম এমপি এবং অন্য কেউ যদি পদত্যাগ করতে না চায়, তবুও আমি পদত্যাগ করব।’ ইমরানের এই বক্তব্যের পর এমপিরা তার নির্দেশ মেনে নেন এবং বলেন, এ ব্যাপারে দলনেতার নির্দেশ অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেবেন তারা।

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সেনা শাসনে থাকা পাকিস্তানে তার ক্ষমতা আরোহনের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর আশির্বাদ ছিল বলেই মনে করা হয়। যার উপর ভর করে বড় দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও মুসলিম লিগকে (নওয়াজ) হটিয়ে ক্ষমতায় বসেন তিনি।

সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে ইমরানের সম্পর্কের অবনতির মধ্যে বিরোধী দলগুলো জোট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে জাতীয় পরিষদে। সেটা আটকাতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার মতো কৌশল ইমরান করলেও পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তা আটকে দেয়। আদালতের আদেশেই গত শনিবার মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে ইমরানের বিদায় ঘণ্টা বাজে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন