কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আষাঢ়ের শেষের দিকে টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে বেড়ে যায় নদ-নদীর পানি। প্লাবিত হয় উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা। ব্যাহত হয় বন্যা কবলিত এলাকায় আমন মৌসুমের চাষাবাদ। পাট, আমনের বীজতলা ও খেতের অন্যান্য ফসল নিয়ে কৃষকের কপালে পড়ে চিন্তায় ভাঁজ। শ্রাবণের শুরুর দিন থেকেই নামতে শুরু করে বন্যার পানি। বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি রূপ বদলায় তার আপন খেয়ালে। শ্রাবণের আকাশ জুড়ে কখনো নীলের ছড়াছড়ি আর সূর্যের প্রখর তাপে মাথার তালু ফেটে যাওয়ার অবস্থা। কখনো আবার ঘনকালো মেঘে ছেয়ে যায় চারিদিক নামে অবারিত বৃষ্টির ধারা। আকাশে বিকট শব্দে হয় বজ্রপাত। প্রকৃতি কখনো অনুকূল কখনো আবার প্রতিকূল। তবুও পিছপা হয় না এখানকার কৃষকেরা। রোদ-বৃষ্টি-বন্যা তবুও চলছে কৃষকের সংগ্রাম। তাদের এ সংগ্রাম জীবন-জীবিকায় টিকে থাকার কৃষিকে সমৃদ্ধ করার।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেউ খেতের পাট কাটছেন। কেউ আবার বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় জমিতে পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ দিচ্ছেন। সমতল এলাকার বেশির ভাগ কৃষক জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করছেন। যেসব কৃষক আউশধান চাষাবাদ করেছেন তারা খেতের পরিচর্যা করছেন। সবমিলিয়ে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাবাইতারি এলাকার পাটচাষি হাফেজ শফিক বলেন, খেতের পাট কাটার সময় হয়েছে। সাতদিন ধরে কামলার পিছনে ঘুরে কামলা পাইনি। সবাই ধান লাগার কাজে ব্যস্ত। শেষে এই প্রখর রোদে নিজের খেতের পাট নিজেই কাটছি। তার মতো ওই এলাকার আরও কয়েকজন কৃষক জানান কৃষি শ্রমিকের সংকটের কথা।
শাহ বাজার এলাকার কৃষক শাহ জাহান আলী ও সফিয়ার রব্বানী বলেন, প্রতিবছরই খরা-বন্যাসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই চাষাবাদ করতে হয়। এখন জমিতে আমন ধানের চারা রোপনের সময়। উঁচু জমিতে পানিতে নেই আর নদী তীরের নিচু জমি পানিতে তলিয়ে আছে। পানির কারণে বিলম্ব হচ্ছে জমিতে চারা রোপন কাজ। তার উপর কৃষি শ্রমিকের সংকটে খেতের পাট কেটে আনতে পারছেন না বলেও জানান এ দুই কৃষক।
সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, নদী এলাকায় বানের পানি ঢুকেছে। আমাদের এলাকায় পানি নাই। যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে জমিতে পানি জমে না। অগত্যা সেচের পানি দিয়ে ৩ বিঘা জমিতে আমনের চারা রোপন করেছি। জমি ফেলে রেখে তো লাভ হবেনা।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা চারা রোপন করেছেন। বন্যা কবলিত এলাকার কৃষকদের নাভি জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাট চাষাবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, উপজেলায় এবারে ৬১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমির পাট কাটা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পাটের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি শ্রমিকের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষিতে শ্রমিক নির্ভরতা কমাতে চাষাবাদে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।