ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উদয়-রবির পৈত্রিক ভিটা

উদয়-রবির পৈত্রিক ভিটা

নড়াইল জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কালিয়া উপজেলা। উপজেলার উপকণ্ঠে আছে একটি ডাকবাংলো। ‘কালিয়া ডাকবাংলো’ বলেই সবাই চেনে বাড়িটিকে। সেই ব্রিটিশ আমলের দ্বিতল বাড়ি। বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী, দেয়ালের কারুকাজ আর প্রশস্ত পরিসর দেখে অনুমান করা যায় যে এটি এক সময় জমিদার বাড়ি ছিল। বর্তমান প্রজন্মের কেউ বলতে পারে না বাড়িটি কাদের ছিল।

এই ডাকবাংলোটি আসলে বিশ্বখ্যাত সেতার বাদক পন্ডিত রবিশঙ্কর এবং তার ভাই নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের পৈত্রিক ভিটেবাড়ি। অথচ এ প্রজন্মের অনেকেই তা জানেন না। বাড়িটি থেকে মাত্র ৩শ গজ দূরে কালিয়া আব্দুস সালাম ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরাও বলতে পারেননি পন্ডিত রবিশঙ্কর ও উদয় শঙ্করের আদি ভিটা কোথায়।

পন্ডিত রবিশঙ্কর ও উদয় শঙ্করের পৈত্রিক ভিটা ১ একর ৭০ শতাংশ জমি নিয়ে অবস্থিত। স্থানীয়রা জানান, এর পরিধি আরও বেশি ছিল। ১৯৪৩ সালের পর থেকে এ বাড়িতে কেউ না থাকায় বেশির ভাগ জমি দখল হয়ে গেছে। বাংলদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাড়িটাকে ডাকবাংলো হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়ির সামনেই ছোট একটি মাঠ। মাঠের চারপাশে পাকা রাস্তা। বাড়িটিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে কালিয়া বাজার, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, পৌর ভবন, উপজেলা অফিস।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ৮-১০টি নার্সারি এবং ইজিবাইক স্ট্যান্ড। পশ্চিম পাশে শহীদ মিনার এবং তার সামনে পানের পাইকারি হাট বসানো হয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই। পৌর কর্তৃপক্ষ এখান থেকে বাড়তি আয়ের জন্য পানের হাট এবং ইজিবাইক স্ট্যান্ড বসিয়েছে বলে জানা যায়।

স্থানীয় প্রবীণ সুজিত কুমার চৌধুরী (৭২) বলেন, ‘রবিশঙ্কর এবং উদয় শঙ্কর বাবুদের আমি দেখিনি। তবে বাপ-দাদার মুখে শুনেছি ব্রিটিশ আমলেই তার বাপ-দাদা বাড়িঘর ফেলে ভারতে চলে যান। সেখানেই জন্ম হয় পন্ডিত রবিশঙ্কর ও উদয় শঙ্করের। তারা কখনোই এখানে আসেননি। ফলে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব জায়গা দখল করে ভোগ করছেন। কিছু জায়গা সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হয়েছে।

স্থানীয় অপর এক প্রবীণ কালীদাস বিশ্বাস বলেন, পন্ডিত রবিশঙ্কর ও উদয় শঙ্করের পৈত্রিক ভিটা দেখতে মাঝে মধ্যে দেশের নানা জায়গা থেকে লোকজন আসেন। কলকাতা থেকেও কবি-সাহিত্যিক ও গবেষকরা আসেন। কিন্তু পর্যটকদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। তিনি এ বাড়িটাকে প্রত্নতত্ব বিভাগের আওতায় সুরক্ষার দাবি জানান। ‘বাড়িটি রক্ষা করা গেলে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় অংশকে সুরক্ষিত করা হবে। সেই সঙ্গে এটিকে ঘিরে বাড়বে পর্যটকদের আনাগোনা। ফলে পুরো উপজেলার অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। সরকারের রাজস্বও বাড়বে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

জাতীয় পার্টির জি এম কাদের পর্যটনমন্ত্রী থাকাকালে কালিয়ার অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব পরিদর্শনে আসেন। তখন তিনি এলাকাবাসীকে জানিয়েছিলেন, গোপালগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বাড়িসহ সমাধিস্থল, সুন্দরবন, চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান, চারণকবি বিজয় সরকার, প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ড. নিহার রঞ্জন গুপ্ত, জারি সম্রাট মোসলেম উদ্দীন বয়াতীর বাড়ি, পন্ডিত রবিশঙ্কর ও উদয় শঙ্করের পূর্বসূরিদের বাড়ি, বড়দিয়া নৌ-বন্দরকে ঘিরে পর্যটন এলাকা করা হবে। সরকারের তৎকালিন পর্যটন মন্ত্রীর সে আশ্বাস আজও পূরণ হয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন