শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্ষায় বাড়ে আকর্ষণ

মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা
  • মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের আলোচিত পর্যটনস্পট হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা। ঝর্ণার অপার্থিব সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চারÑ এ দু’এর সংমিশ্রণ যেন আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে খৈয়াছড়া ঝর্ণাকে। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে পর্যটক।

সারাবছরই খৈয়াছড়া ঝর্ণা পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে যেন তার সব রূপ মেলে ধরে এ প্রাকৃতিক ঝর্ণাটি। বর্ষায় যত বৃষ্টি বাড়ে তত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে ঝর্ণার পথঘাট। তবে পথঘাট যত ঝুঁকিপূর্ণ হয় তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে পর্যটক। কেননা এসময় ঝর্ণাধারার গতিবেগ বাড়ে। দানবের মতো গর্জন করতে থাকে ঝর্ণা। মূল ঝর্ণায় পৌছানোর মাইলখানেক পথ আগে থেকে শোনা যায় এ গর্জন। পর্যটকরা ঝর্ণার দিকে যত এগুতে থাকে ততই বাড়তে থাকে গর্জনধ্বনি। তাই ঝুঁকি বাড়া স্বত্বেও ঝর্ণা তার ভয়ানক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ করে পর্যটকদের টেনে নিয়ে যায় তার কাছে।

পর্যটকদের ভাষ্যমতে, আকার আকৃতি ও গঠনশৈলির দিক দিয়ে এখনও পর্যন্ত  মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা। মোট ৯ টি মূল ধাপ ছাড়াও এর রয়েছে অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ।

সম্প্রতি ঝর্ণায় ঘুরতে আসেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্য সরোয়ার উদ্দিন। এ ঝর্ণার বিশেষ কি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, আমি আরো অনেক ঝর্ণায় গিয়েছি। বেশিরভাগ ঝর্ণাতে একটি বা দুটি ধাপ থাকে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার একটি স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট হলো অন্যান্য ঝর্ণার মতো এটি সরাসরি ওপর থেকে নিচে এসে পড়েনি। বরং একধাপ থেকে অন্য ধাপ করতে করতে সর্বমোট ৯ টি ধাপ অতিক্রম করে ঝর্ণাটি। যে দৃশ্য দেখে যে কারোরই মন জুড়াবে।

আরও পড়ুনঃ  মা হতে চলেছেন জান্নাতুল পিয়া

খৈয়াছড়া ঝর্ণায় মোট ৯টি ধাপ থাকলেও সাধারণত ৩-৪ টি ধাপ পর্যটকদের চোখে পড়ে। বাকি ধাপগুলো দেখতে হলে বাম পাশের খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে আরো শ’খানেক ফুট ওপরে। শুষ্ক মৌসুমে এ ধাপগুলোতে ওঠা অনেকটা সহজ হলেও বর্ষা মৌসুমে এসব ধাপ হয়ে উঠে রীতিমতো মৃত্যুফাঁদ। বর্ষামৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেককেই দেখা যায় এসব খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে। এজন্য সঙ্গে নিয়ে আসেন শক্তপোক্ত দঁড়ি। একজন উঠে কোনো গাছের শক্ত ডালে দঁড়ি বেধে দিলে বাকিরা সে দঁড়ি বেয়ে অতিক্রম করেন একের পর এক ধাপ।

এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝর্ণার সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছাতে গিয়ে ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনাও। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিতে নিরুৎসাহিত করে খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এডভেঞ্চার ঠিক না। খৈয়াছড়া ঝর্ণার প্রথম ধাপই মূলত বেশি সুন্দর। বেশিরভাগ পর্যটকই এ সৌন্দর্য উপভোগ করে।

খৈয়াছড়া ঝর্ণার প্রথম ধাপের জনপ্রিয়তাও অত্যাধিক। এ ধাপে যাওয়া মাত্রই যে  কারও মন ভালো হয়ে যাবে নিমিষেই। বেশ উঁচু থেকে পাহাড়ের নিঃশব্দতা ছাপিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। পানি যেখানে পড়ে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে পুকুরের মতো অগভীর জলাশয়। সেই হিম হিম ঠাণ্ডা পানিতে মানুষ গোসল করে, সাঁতার কাটে। স্বাদ নেয় ভ্রমনের।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন