দ্রব্যমূল্যর উর্দ্ধগতি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তাদের প্রয়োজন গুলো ও যেনো এখন বিলাসিতায় রূপ নিচ্ছে। সাধারণ জনগণের সাথে সাথে দুর্ভোগ বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। যারা অনেকেই পরিবারের দায়িত্ত্ব সাথে নিজের দায়িত্ব বহন করে চলেছে, আবার কেউ কেউ পরিবারের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। কেমন যাচ্ছে তাদের দিন গুলো দ্রব্যমূল্যর এই উর্ধ্বগতিতে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনায় তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী রোকাইয়া তিথি –
বিশ্বব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের পথে সৃষ্ট সমস্যা গুলির মধ্যে অন্যতম। বেঁচে থাকার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস প্রয়োজন কিন্তু বিশ্বব্যাপি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলস্বরূপ, চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারন জনগণ। সাধারণ মানুষের সাথে ভোগান্তি বেড়েছে শিক্ষার্থীদের। তাদেরকে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে দূর শহরে থাকতে হয়। বাকি আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মত তাদেরও জীবন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য চরম ভোগান্তিতে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট কোনো আয়ের উৎস না থাকায় টিউশনের সামান্য টাকায় তাদের জীবনযাপন। এমতাবস্থায় এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শিক্ষার্থীদের অবস্থা একেবারে শোচনীয়। আর ঢাকা শহরের মত এত বড় জায়গায় তো অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। মেসে বা ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। এই চরম দূরাবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর মানবেতর জীবনযাপন করছে।
-তপু
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
প্রথমেই আসি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রধান উপাদান বিভিন্ন বই,খাতা ইত্যাদি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে এসকল জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের ক্ষেএে তা ক্রয় করা সাধ্যের বাহিরে চলে যাচ্ছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা বিমুখী হচ্ছে। আমাদের জীবনের বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান হচ্ছে খাদ্য। সকল খাবারের দাম বৃদ্ধির ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে তিনবেলা খাবারের পরিবর্তে দুবেলা খেয়ে থাকতে হচ্ছে। সারাদিন ক্লাস করার ফাঁকে ব্রেক সময়ে ভারি খাবারের পরিবর্তে হালকা কিছু খেয়ে থাকতে হচ্ছে কারণ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়াতে বাইরে থেকে খাবার কেনার সামর্থ্য হয় না। ঠিকমতো খাবার না খাওয়ার ফলে এই বাড়ন্ত বয়সে তারা বিভিন্ন অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। আরেকটি দিক হলো তেলের দাম বাড়ায় যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত খরচ বাড়ছে আগে যেখানে ১০ টাকা দিয়ে যেতো এখন লাগে ১৫ টাকা। প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের পরিবার মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত। এমনত অবস্থায় দ্রব্যর দাম বৃদ্ধির ফলে বাবা -মা র উপর চাপ পড়ছে।অনেক পরিবারই তাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী তার পরিবারের কাছে বেশি চাপ দিতে পারে না ফলে পড়াশোনা থেকে শুরু করে সকল প্রয়োজনীয় কাজের ব্যায় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলস্বরূপ, বেশিরভাগ সময় দেখা যায় তারা সর্বোপরি বিষয় নিয়ে হতাশায় ভোগে।
-মৌতুসী
শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধিতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। মূল্য বৃদ্ধির সাথে শিক্ষার্থীর টুকিটাকি আর্থিক চ্যুতি বৃদ্ধি পেতে পারে, যেটি পড়াশোনা এবং বাকি কাজে অসুবিধা সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীরা অনেকেই টিউশন নির্ভর হয়ে থাকে। দ্রব্যমূল্যের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে বই, যাতায়াত, আবাসন খরচ কষ্ট হচ্ছে। কিছু ছাত্রছাত্রীর জন্য চিকিৎসা বাবদে আলাদা খরচ হয়ে থাকে এবং তারা অতিরিক্ত উপার্জনের তাগিদে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। তারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেংগে পড়ছে। নূন্যতম চাহিদা মেটানো যেনো অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে।
-মোঃ আহসান হাবিব
শিক্ষার্থী, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।