ঢাকা | বুধবার
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জবিতে নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা

জবিতে নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসের নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। ময়লা-আবর্জনায় ড্রেনগুলো ভরাট থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান জুড়ে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অপরিচ্ছন্ন এসব ড্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করলেও সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি এখনো।

সমন্বয়হীনতা, উদাসীনতা,বিভিন্ন সংকট,প্রতিবন্ধকতা এবং ওয়ার্ক প্ল্যানের অভাবে ড্রেনগুলোতে স্বাভাবিক গতি ফেরানো সম্ভব হচ্ছেনা৷ বিশেষজ্ঞদের দাবি অপরিচ্ছন্ন ড্রেনগুলোতে সহজেই মশার উপদ্রব বাড়ে। বর্তমানে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ বিদ্যমান। তাই অপরিচ্ছন্ন ড্রেন সবার জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাল পয়েন্ট শনাক্ত করে ড্রেনগুলোতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ সৃষ্টি করার পরামর্শ তাদের।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রবেশের ডান পাশের ড্রেন পরিপূর্ণ হয়ে আছে পলিথিন, কাগজ, কাপড়ের টুকরো আর প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে। এতে করে সৃষ্টি হয়েছে আবদ্ধতা। যার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। ড্রেনে শ্যাওলা জমার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে জমাট বেঁধে ময়লা-আবর্জনা মিশে পানি কালো হয়ে গেছে৷ শান্ত চত্বরের ম্যুরালের নিচের অংশেও নানান অব্যবহৃত সামগ্রী ও পানি জমে রয়েছে।

নতুন একাডেমিক ভবনের পাশ থেকে দ্বিতীয় গেইট ও ছাত্রী কমনরুমের পেছন পর্যন্ত ড্রেনের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।এখানেও বোতল, প্লাস্টিক সামগ্রী, জুসের গ্লাস আর পলিথিন স্তূপাকারে পড়ে আছে ড্রেনের ওপর। এতে পানির প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

ময়লা আর পানি একত্রে মিশে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আর তাতেই উড়ছে মশা । ছাত্রী কমনরুমের পেছনের দিকে ময়লা পানিযুক্ত ড্রেনের দুই পাশেই উচ্ছিষ্ট জিনিসপত্র পড়ে আছে ৷ যেটি দেখলে ময়লা ফেলার স্থান মনে হয়।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান-অর্থনীতি বিভাগের বিল্ডিংয়ের সামনে থাকা ড্রেনে পড়ে আছে ময়লার বিন । একইসাথে গাছের পাতা, বোতল ও প্লাস্টিক সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই বিল্ডিংয়ের পেছনেই রয়েছে উন্মুক্ত পাঠাগার। তবে উন্মুক্ত পাঠাগারের বারান্দার পেছনে থাকা ড্রেনও ভরাট ময়লা আবর্জনার স্তূপে। যেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ আর সৃষ্টি হয়েছে মশার উপদ্রব।

ক্যান্টিনের বিপরীত পাশে থাকা বেসিনের পানি যাওয়ার জন্য যে ড্রেন রয়েছে সেটি ভরাট হয়ে আছে ময়লা পানিতে। দীর্ঘদিন ধরে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় এখানেও ময়লা পানি জমে বুদবুদ তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পাশে ও পেছনে থাকা ড্রেনগুলোর অবস্থাও একই। ড্রেনগুলোতে শ্যাওলার পাশাপাশি জন্মেছে আগাছা। বিজ্ঞান ভবনের পেছনে ও শিক্ষক ডরমিটরির পাশে থাকা ড্রেনগুলো যেন মশার উপদ্রবের জন্য উপযুক্ত স্থান। এখানেও ময়লা আর পানি একত্রে মিশে পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। ভন ভন করে মশা উড়ছে সেই ড্রেনে ৷ গণিত বিভাগের সামনের ড্রেনও ময়লায় পরিপূর্ণ।

এছাড়াও দ্বিতীয় গেইটের পাশে বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট ও ময়লা-আবর্জনে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়েছে। এসব উচ্ছিষ্টে মশা উড়ছে এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য দুই ধরনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। একটি হল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত যে পানি ব্যবহৃত হয় সেটি দ্রুত প্রবাহের ব্যবস্থা। অপরটি যখন বৃষ্টিপাত হয়ে অল্প সময়ের অধিক পানি জমে যায় সেটি দ্রুত প্রবাহের ব্যবস্থা। পানি যাবে ড্রেন দিয়েই৷ তাই ড্রেনগুলো সম্পূর্ণ ক্লিয়ার থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ঢাল কোন দিকে সেই সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে৷ যেন পানিটা সেই লাইন দিয়ে নিচে চলে যায় সহজেই। তাহলে পানি জমবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে,প্লাস্টিক,পলিথিন সহ বিভিন্ন বর্জ্য যেন ড্রেনে না পড়ে সেজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বিন রাখতে হবে। জমে থাকা পানির মধ্যে যেহেতু মশা-মাছি বাস করে তাই প্রতিনিয়ত একটা ঝুঁকি থাকে ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ হবার। সেক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই।

জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরকে আহবায়ক ও সহকারী রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মোহাম্মদ কামাল হোসেন সরকারকে সদস্য-সচিব করে মোট ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেনগুলো প্রাথমিকভাবে পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিলেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকেনি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ময়লা ফেলার জন্য নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক বিন। ফলে যেখানে সেখানে ফেলা ময়লাগুলো বিভিন্নভাবে ড্রেনে পড়ে পানির প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা, কয়েকটি ড্রেনের পাশে কর্মচারীদের বসবাসের ফলে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ড্রেনগুলোতে পড়ছে।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এমন হতে পারেনা। ড্রেনগুলো ময়লায় আবদ্ধ। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। সেসময় ড্রেনগুলোতে মশার উপদ্রব সৃষ্টি হচ্ছে। ক্যাম্পাসে আবার ময়লার স্তূপও দেখা যায়। এগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কমিটির আহবায়ক এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদের বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই নতুন ভবনের ছাদ পরিষ্কার করা হয়েছে। ডরমিটরির সামনের ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। বাকি ড্রেনগুলোও পরিষ্কার করা হবে পর্যায়ক্রমে।

পরিচ্ছন্নতা কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মোহাম্মদ কামাল হোসেন সরকার বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় ক্যাম্পাসে মশার লার্ভার ঔষধ দিচ্ছি এবং ধোঁয়া স্প্রে করছি। এছাড়াও ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পরিচ্ছন্নতা কমিটির। প্রকৌশল দপ্তর থেকেও কয়েকটি ড্রেন পরিষ্কার রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন