শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী শিক্ষায় নিরাপদ বাহন

নারী শিক্ষায় নিরাপদ বাহন

মেহেরপুরের সীমান্তঞ্চলের নারী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের নিরাপদ বাহন এখন বাইসাইকেল। যাতায়াতের ঝামেলা এড়াতে এবং দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে অনেক শিক্ষার্থীরাই ছিল বিদ্যালয় বিমুখ। ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী বাইসাইকেল উপহার পাওয়ায় তাদের দেখাদেখি এখন সকল শিক্ষার্থীদের বাহন বাইসাইকেল। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিরাপদ বাহন মনে করে পরিবার থেকে ও কিনে দেয়া হচ্ছে বাইসাইকেল। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে গাংণী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সীমান্তবর্তী তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম থেকে আসা প্রায় ১২শ শিক্ষার্থী উক্ত বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে।

সীমান্তবর্তী এলাকা তেঁতুলবাড়িয়া, রংমহল, খাসমহল, রাধাগোবিন্দপুর, করমদি, পলাশীপাড়াসহ আশপাশের অন্তত ৬ থেকে ৭টি গ্রাম রয়েছে। বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে হয় পায়ে হেটে বা অটোভ্যান কিংবা আলমসাধুর মত ঝুকিপূর্ণ যানবাহনে। এতে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হতো শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তায় তেমন গাড়িও চলেনা। সময়মত বিদ্যালয় যেতে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। নানা ঝামেলায় ঝরে পড়ছিল অনেকে শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে সরকারি প্রকল্পের সহায়তায় স্থানীয় উইনিয়ন পরিষদ থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়। তবে তা যতসামান্য হলেও একে অপরের দেখাদেখি সব অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের কিনে দিয়েছেন বাইসাইকেল। বিভিন্ন গ্রাম থেকে সারিবদ্ধভাবে বিশেষ করে মেয়েরা বাইসাইকেল চড়ে যাতায়াত করছে বিদ্যালয়ে। একই পোষাকে মেয়েরা বিদ্যালয়ে যাতায়াত করায় একদিকে যেমন রাস্তার শোভা বর্ধন হচ্ছে অন্যদিকে বিড়ম্বনা কমেছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিদিনের যাতায়াত ভাড়াও লাগছেনা। পরিবেশ বান্ধব বাইসাইকেল হয়ে উঠেছে সীমান্তাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও শখের একমাত্র বাহন।

আরও পড়ুনঃ  খাদিজার নিঃশর্ত মুক্তি চায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত তেতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সাড়ে পাঁচ শতাধিক ছাত্রী। ওরা এখন ছেলেদের মতোই বাইসাইকেলে যাতায়াত করে। এখন আর তাদের  অটোভ্যান কিংবা আলমসাধুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়না। বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারে সময়মত।

জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ এলাকাটি অনেকটাই অবহেলিত এবং অধিকাংশ রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল ও খানাখন্দে ভরা। ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের শিক্ষার্থীরাও এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ৪ থেকে ৫ বছর আগে ছেলেরা সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করলেও মেয়েদের ভ্যানে ও পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হতো। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে পাঁচ শতাধিক মেয়েদের বাইসাইকেল কিনে দেয়া হয়। চার বছর আগে কয়েকজন ছাত্রী বাইসাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করে। এরপর এর সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকে। বর্তমানে তিন থেকে চারশো ছাত্রী নিয়মিত বাইসাইকেলে যাতায়াত করে। এসব ছাত্রীরা তাদের বান্ধবীদেরকেও বাইসাইকেলের পেছনে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে আসতে সহায়তা করে।

তেতুলবাড়ীয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামান জানান, ছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য চেয়ারম্যান সাহেব ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মিলে বাইসাইকেল প্রদান করেছি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা এখন কোন বিড়ম্বনা ছাড়ায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারছে।

নারীদের আধুনিক শিক্ষায় এগিয়ে নিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন সরকার। এমন উদ্যোগ থেকেই শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বাইসাইকেল দেওয়ার উদ্যোগ  নেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান  নাজমুল হুদা বিশ্বাস। ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস জানান,তেতুলবাড়ীয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪০০টির ও বেশি গরিব মেধাবী ছাত্রীর যাতায়াতে সুবিধার জন্য সরকারি প্রকল্পে ও  ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি বাইসাইকেল দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  শৈলকুপায় পর্যাপ্ত শিক্ষকের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ,মাহফুজুল হোসেন জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয় প্রধান ও শিক্ষার্থীদের পরিবার থেকে নেয়া উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানায়। ওই বিদ্যালয়ে অনেক ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। বাইসাইকেল চড়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করার সুবিধার্ধে শতভাগ উপস্থিতি হবে এমন প্রত্যাশার পাশাপাশি এমন একটি উদ্যোগকে আমি প্রশংসা করি।

সংবাদটি শেয়ার করুন