শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নওগাঁ পলিকেটনিক ইনস্টিটিউট-

৪০ পিসির যন্ত্রাংশ লুট

৪০ পিসির যন্ত্রাংশ লুট

নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিকিউরিটি গার্ডকে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা কলেজের কম্পিউটার সফটওয়্যার ল্যাবের তালা ভেঙে ৪০টি পিসির প্রায় ১২ লাখ টাকা মূল্যের যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে গেছে। সিকিউরিটি গার্ডদের অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত কাজে নিয়োজিত রাখায় কলেজটি এ ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, শহরের আরজী নওগাঁ লাটপাড়া মহল্লায় অবস্থিত নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এ সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ৩টি পদ থাকলেও সেখানে ফরিদুল ইসলাম ও মানিকুর রহমান নামে দুইজন কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে ফরিদুল ইসলামের বাড়ি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলায় এবং মানিকুর রহমানের বাড়ী নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায়।

এ প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর যাবত ফরিদুল ইসলাম চাকরি করলেও মানিকুর রহমান আছেন দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত। দীর্ঘ সময় চাকরির পাশাপাশি ভালো গাড়ি চালক হওয়ার সুবাদে প্রতিষ্ঠানে আসা সকল অধ্যক্ষদের সঙ্গে বাড়তি শখ্যতা রয়েছে মানিকুর রহমানের। এ শখ্যতার কারণে গত ১২ বছর ধরে অদ্যাবধি মানিককে সিকিউরিটি গার্ড হয়ে কাজ করতে হয় না। যখন যে অধ্যক্ষ এসেছেন তাদের পুরো পরিবারের সবধরনের ব্যক্তিগত কাজ করে মানিক। শুধু ব্যক্তিগত কাজ-ই নয়। এ সিকিউরিটি গার্ডকে বসানো হয়েছে কলেজের হিসাব শাখায়। সেখানে কলেজের সব ধরনের আদায় হিসাব সহকারি হিসেবে মানিক নিজেই করেন। এতে করে শুধুমাত্র একজন সিকিউরিটি গার্ড কাজ করায় কলেজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার ১৪ অক্টোবর রাতে ডিউটিতে আসেন সিকিউরিটি গার্ড ফরিদুল ইসলাম। ডিউটিরত অবস্থায় আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টায় আকস্মিক তার উপর হামলা করে বেদম মারপিট করে দুইজন মাস্ক পরিহিত ডাকাত। ফরিদুল জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার মুখে কাপড় দিয়ে রেলিং এর সঙ্গে বেঁধে রাখে ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলায় ৩০৫ নম্বর কক্ষের কম্পিউটার সফটওয়্যার ল্যাবের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ডাকাতরা। সেখানে থাকা প্রায় ৪০টি কম্পিউটারের পিসি থেকে এসএসডি, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, র‌্যাম, প্রসেসর খুলে নেয় তারা। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। এরপর সিকিউরিটি গার্ডকে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। শুক্রবার ভোর ৫টায় কলেজের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সেকেন্দার আলীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন অধ্যক্ষ। তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে আসেন শিক্ষকরা এবং পুলিশকে মুঠোফোনে জানানোর পর ফরিদুলকে উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  দাবি না মানলে বেগমগঞ্জ পর্যন্ত লংমার্চের ঘোষণা

কলেজের ড্রাইভার গোলাম ফরিদ শেখ বলেন, ভোর ৫টায় কলেজে ডাকাতি হওয়ার খবরটি জানিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলা হলে শিক্ষকদের নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। সিকিউরিটি গার্ডকে বেঁধে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে স্যাররা কম্পিউটার ল্যাবে গিয়ে দেখেন ৪০টি পিসির সব মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। সিসি ক্যামেরায় ডাকাতির পুরো দৃশ্য স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। তবে মাস্ক পরিহিত থাকায় ডাকাতদের চেনা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী বলেন, কলেজে সিকিউরিটি ব্যবস্থায় নড়বড়ে অবস্থার জন্য অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা মনোভাবই দায়ি। যার যে দায়িত্ব তাকে দিয়ে সেটা করানো হয় না। সিকিউরিটি গার্ড মানিক কখনোই গার্ডের দায়িত্ব পালন করেন না। মানিক অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবেই পরিচিত। মানিককে দিয়ে কলেজের পুরো হিসাব শাখা পরিচালনা করা হয়। যে ডাকাতি হয়েছে, সেটার দায় অধ্যক্ষের বলে অভিযোগ করেন তারা।

সিকিউরিটি গার্ডদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উদাসীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুর রকিব বলেন, যেটা ঘটেছে সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো গাফিলতি ছিলো না। বিষয়টি থানায় অভিযোগ করার পর ইতিমধ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিপ্তরে জানানো হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে মাঝেমধ্যে মানিকসহ বিভিন্ন জনকে দিয়ে কলেজের অন্যান্য কাজগুলো করানো হয়। তবে কাওকে ব্যক্তিগত কাজে সবসময় ব্যবহারের অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবী করেন তিনি।

নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, এবিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুনঃ  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৪৩তম বিসিএসে অংশ নিতে পারবেন

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন