শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাইসাইকেলে এগোচ্ছে নারী শিক্ষা

বাইসাইকেলে এগোচ্ছে নারী শিক্ষা

দরিদ্র  জমির উদ্দীনের মেয়ে মনালিনা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া নওগাঁর পত্নীতলার প্রত্যন্ত রামজীবনপুর গ্রামের মেধাবী এ কিশোরি প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে বিদ্যালযে যাচ্ছে বাইসাইকেল চালিয়ে।

মনালিসা বলেন, আমরা তো গরিব। বাবা মানুষের জমিতে কাজ করে। আমার ইচ্ছে আমি শহরের স্কুলে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাবা মায়ের কষ্ট লাঘব করবো। যার জন্য বাবা আমাকে আমাদের এক আত্নীয়ের কাছ থেকে পুরাতন একটি সাইকেল এনে দিয়েছে। যা দিয়ে আমি স্কুলে যাওয়া আসা করি। প্রথমদিকে মানুষ বাবা-মা ও আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলতো। তখন বাবা মা আমাকে বলতো অন্যের কথায় কান দিওনা। তুমি শুধু মন দিয়ে লেখাপড়া করো।

নজিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মনালিসা শুধু নয় সময়ের পালাবদলে সরেজমিনে দেখা যায়, বরেন্দ্র এলাকার বিদ্যালয়ের সামাজিক বাধা ডেঙিয়ে  দল বেঁধে সাইকেলে যাতাযাত করছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাচ-গানে অংশগ্রহণ ছাড়াও  লড়ছে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিংসহ সমাজের নানান রকম কুপ্রথার বিরুদ্ধে।

নজিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রথমত মানুষ বিভিন্ন ধরণের বাজে কথা বলতো। আমরা তাদের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করি। এখন আর কেউ কিছু বলেনা। আমরা সাইকেল নিয়েই সবসময় স্কুলে আসি। এতে করে আমাদের সুবিধা হয় ও সময় মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারি।   

নানা বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকার নারীশিক্ষা। পিছিয়ে থাকা এ জনপদে কয়েক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে নারীশিক্ষার হার। প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে দূর-দূরান্ত থেকে সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে লড়ছে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিংসহ সমাজের নানা রকম কুপ্রথার বিরুদ্ধে। নারীদের আধুনিক শিক্ষায় এগিয়ে নিতে নানা রকম পদক্ষেপ নেবার কথা জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন।

আরও পড়ুনঃ  শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনছে মন্ত্রণালয়

নজিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক প্রণব দাস মিঠু বলেন, সামাজিক দৃষ্টি পরিবর্তন হওয়ায় ঝড়ে পড়া রোধসহ নারীশিক্ষা বেগবান হচ্ছে। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেন।

প্রধান শিক্ষক রমজান আলী আনন্দবাজারকে জানান, নজিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অত্র এলাকার সনামধন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দূর- দূরান্ত থকে প্রায় শতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী বাইসাইকেলে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। তাদের বাইসাইকেল রোদ- বৃষ্টিতে যেন নষ্ট না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসক গ্যারাজ করার জন্য দুই লাখ টানা অনুদান দিয়েছেন। আমরা গ্যারাজের কাজ শুরু করেছি আর্থিক সংকটের কারণে শেষ করতে পারিনি। সরকার  বা কোন দাতা সংস্থা গরীব অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে একটি করে বাইকেল উপহার দিতো তাহলে আমার শিক্ষার্থীরা ঝড়ে যেতো না। মন দিয়ে লেখাপড়া করতে পারতো।

নওগাঁ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কালাম আযাদ আনন্দবাজার কে বলেন, নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ধরণের শিক্ষাউপকরণ দিয়ে তাদের উৎসাহিত করছে। যার একটি অংশ হলো বাইসাইকেল। পত্নীতলা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার বাইসাইকেল প্রতি তিনমাস পর পর গরীব শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। যা আগামীতেও অব্যহত থাকবে।

পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ জানান, নারী শিক্ষা নিশ্চিত করণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর একটি অংশ গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ করা। যা আমাদের পত্নীতলা উপজেলায় অব্যহত আছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন