শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমেরিকা থেকে লাঙ্গলকোটে ক্লাস!

আমেরিকা-থেকে-লাঙ্গলকোটে-
  • সাত বছরে ২৫ লাখ টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন

এক কিংবা দুই মাস নয়, গত সাত বছর ধরে সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করছেন কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের এক মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক মাওলানা মহিউদ্দিন। সেখানে বসেই তিনি অবৈধভাবে উত্তোলন করছেন বেতন-ভাতা। বক্সগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যক্ষ ও আরবি শিক্ষক তিনি। বক্সগঞ্জ ইউপির বাকীহাটি গ্রামের মৃত আশ্রাফ উদ্দিনের ছেলে।

গত ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর অসুস্থতার কথা বলে আমেরিকায় আসা যাওয়া করেন মহিউদ্দিন। অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ টাকা গায়েবি বেতন উত্তোলন করেছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৯ সালে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ৬শ’ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। ১৯৮৯ সালে আরবি প্রভাষক হিসেবে বক্সগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় নিয়োগ পান মাওলানা মহিউদ্দিন। পরবর্তীতে সহকারী অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি পান। তার শিক্ষক নিবন্ধন নং-৩০৪২০০।

২০১২ সালের দিকে বড় মেয়ে আমেরিকায় যান। এর দু’বছর পরে ওই শিক্ষকের বড় ছেলেও আমেরিকায় চলে যান। ছেলে মেয়ে আমেরিকায় থাকাকালীন ২০১৫ সালের দিকে মাও. মহিউদ্দিন সেখানে চলে যান। আসা যাওয়ার মধ্যেই সাত বছর তিনি আমেরিকায় বসবাস করে আসছেন। তবে, আমেরিকায় বসে তিনি নিয়মিত ক্লাসও করেন। ডিজিটাল ফিঙ্গার মেশিনে ফিঙ্গারও দেন। আবার হাজিরা খাতায়ও স্বাক্ষর করেন। প্রতিমাসে বেতন ভাতাও উত্তোলন করেন। মাদ্রাসায় শিক্ষক হাজিরা খাতা থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

মাও. মহিউদ্দিন ৩৪ হাজার টাকা বেতন ও ঈদ বোনাসসহ এ পর্যন্ত অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। তার বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দীন চলতি বছরের ১২ মার্চ থেকে তার বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন। আমেরিকা বসে অসাধ্যকে সাধন করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  করোনা স্বাভাবিক হলেও চালু থাকবে অনলাইন পাঠদান

তার এসব অনিয়মের সহায়তা করেন মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ও কম্পিউটার শিক্ষক মনির। এ বিষয়ে অধ্যক্ষের বক্তব্য নিতে গেলে কম্পিউটার শিক্ষক মনির সাংবাদিকদের তথ্য দিতে অধ্যক্ষকে নিষেধ করেন। এ কারণে আমেরিকায় অবস্থান করা অভিযুক্ত সহকারী অধ্যক্ষ মাওলানা মহিউদ্দিনের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে তার ছোট ভাই মাওলানা নেছার উদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালে তার ভাই আমেরিকা যান। তিনি প্রতিবছর যে প্রসেসিংয়ে আসা যাওয়া করেন, তাতে উনার কোনো সমস্যা হয় না। এবার যে গেছেন উনার বড় একটা অপারেশন হয়েছে এ জন্য লেট হচ্ছে।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাদ্রাসার সিনিয়র আরবি প্রভাষক মহিউদ্দিন আমেরিকায় আসা যাওয়া করেন। সর্বশেষ মার্চ মাসের দিকে তিনি আমাদের জানাইছেন তিনি অসুস্থ। ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়েছেন। পরে শুনি উনি আমেরিকায় চলে গেছেন। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে তিনি বেতন ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেন। পরে আমরা তার বেতন ভাতা বন্ধ করে দেই।

মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, তিনি কমিটিতে নতুন। দায়িত্ব পাওয়ার পর শিক্ষক মহিউদ্দিনের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন। আগামী মিটিংয়ে উনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দীন বলেন, মাও. মহিউদ্দিন আমেরিকায় আসা যাওয়া করতেন। গত বছর থেকে অনুপস্থিত আছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান মেহবুব বলেন, বিষয়টি এইমাত্র অবগত হয়েছি। শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুনঃ  প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে ভাবছে মন্ত্রণালয়

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন