পরনে চিকিৎসকের পোশাক। পাশেই রাখা হয়েছে শরীরের তাপমাত্রা, ওজন ও উচ্চতা মাপার যন্ত্র। চোখ পরীক্ষার জন্য হাতে আই চার্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন খুদে শিক্ষার্থী। কারও বয়স ৮ আবার কারও বয়স ১২। প্রথম দেখাতে তাদের কার্যক্রম দেখে অবাক হবে যে কেউ! বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া এসব শিক্ষার্থীকে বলা হয় খুদে ডাক্তার। শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার পাশাপাশি সহপাঠিদের দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা।
বগুড়ার শিবগঞ্জের গণেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য এটি। ওই বিদ্যালয়ের মেধাবী ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত হয়েছে খুদে ডাক্তার টিম। প্রতি বছর ২ বার সহপাঠীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে জমা দেন প্রতিবেদন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে ভিটামিন এ ক্যাপসুল,কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানো ও স্বাস্থ্য দিবস সহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেয় খুদে চিকিৎকের এই টিম।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ২০১১ সাল থেকে দেশব্যাপী শুরু করে “খুদে ডাক্তার” কর্মসূচি। কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রতি ক্লাস থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বাছাই করে একটি দল গঠন করা হয়। তারাই ‘খুদে ডাক্তার’ নামে পরিচিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এ উদ্যোগের কারণে খুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখার ভিত তৈরি হচ্ছে।
মঙ্গলবার গণেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণি কক্ষের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। আর ক্ষুদে ডাক্তারের টিমের সদস্যরা একজন করে ডাকছে। এরপর ঐ শিক্ষার্থীর নাম লিখে তার ওজন, শরীরের তাপমাত্রা ও উচ্চতা মাপছে। পাশে দাঁড়িয়ে পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক।
এ সময় কথা হয় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া খুদে ডাক্তার সোহাদা আক্তারের সাথে। সে জানায়, ডাক্তারের পোষাক পরে যখন এসব কাজ করি তখন নিজেকে সত্যিকারের ডাক্তার মনে হয়। আমি বড় হয়ে একজন আদর্শ ডাক্তার হতে চাই।
এই টিমের আর এক সদস্য চতূর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া খুদে ডাক্তার কেয়া আক্তার বলেন, এই টিমে যোগ দেয়ার পর আমি আগের থেকে আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছি। শিক্ষকগনও আমাদের অনেক উৎসাহ দিচ্ছেন।
গণেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম দুলাল জানান, চলতি মাসের ২০ আগস্ট থেকে আমাদের স্কুলে ক্ষুদে ডাক্তার কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। চলবে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত। এছাড়া স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সকল প্রোগ্রামে আমাদের খুদে ডাক্তাররা অংশ নেয়। আমরাও নিবিড় ভাবে তাদের কার্যক্রম তদারকি করি। এই কার্যক্রম নিসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।
একই দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের তালিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। তালিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, খুদে ডাক্তারের টিম সব শিক্ষার্থীর ওজন ও উচ্চতা মেপে প্রতিবেদন খাতায় লিপিবদ্ধ করে। মাঝে মাঝে তারা দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তিও পরীক্ষা করে তালিকা তৈরি করে। এরপর ওই তালিকা একজন শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করেন। যেসব শিক্ষার্থীর শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে তাঁদের পরবর্তী দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম সারওয়ার জাহান দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকাকে বলেন, উপজেলায় বর্তমানে ১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। যেখানে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। আমাদের সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়েই খুদে ডাক্তার কর্মসূচি চলছে। এ কর্মসূচি সরকারের যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা যেমন স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে তেমনি ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনের মন মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। অন্যদিকে ক্ষুদে ডাক্তার টিমের শিক্ষার্থীদের মাঝে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা তৈরি হচ্ছে। এতে তারা পড়াশোনায় আরও বেশি মনোযোগী হচ্ছে।