ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্ষায় ডুবে যেতে পারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে গল্লামারী থেকে ময়ূর ব্রিজ পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ সড়কের কেসিসির লিনিয়ার পার্ক সংলগ্ন ময়ূর নদের সংযোগ নিষ্কাশন খাল অবৈধ দখল করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এখন নতুন নতুন পাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে খুপড়ি থেকে। এছাড়া অবৈধ দখলদাররা বহুতল ভবন তৈরির চেষ্টা করছে।

খাল ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতা এবং পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাস। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ গোটা এলাকা জলাবদ্ধতার কারণে ডুবে যেতে পারে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে পানি নিষ্কাশন পুরোপুরি বন্ধ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের লেকের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশও। দূষণের মাত্রা এতোটাই তীব্র যে, কেউ এই পানিতে পা দিতে পারছে না। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকার লেকটির এ অংশের সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তীব্র দূষণের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না।

গত ২০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে আসলেও চূড়ান্তভাবে এই অবৈধ দখল আজও মুক্ত হয়নি। শেষ দফায় দুবছর আগে প্রশাসনের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড গল্লামারী বাাজার সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করলেও শেষ পর্যন্ত ওই স্থানটিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।

এছাড়া ওই এলাকায় কয়েকবছর আগে কাঁচা-আধা পাকা ঘর থাকলেও এখন ওই খালের উপর অবৈধভাবে স্থায়ী পাকা ঘর তুলে দোকান এবং ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দোকানদাররা জানান, শাহিন নামের এক ব্যক্তি এখানে এক পাশে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। মো. জুয়েল ও সামাদ নামীয় আরও দুজন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তবে তাদের মধ্যে কে বা কারা খাস খালের উপর স্থাপনা নির্মাণ করেছেন তারা তা জানেন না। তাদের কাছে ওই ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বরেএবং ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের মতামত তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।

খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ হলের একটি সূত্রে জানা গেছে, ময়ূর নদের সংযোগ খালের নিষ্কাশন অংশ অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ীভাবে দোকানসহ ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় হলের পাশের এই খালে পানি আর নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এতে মারাত্মকভাবে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না হল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৫-২০ বছর আগেও এই খালটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা এলাকার বেশিরভাগ পানি নিষ্কাশিত হতো।

এ প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস জানান, পানি নিষ্কাশনের সমস্যাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এখন খুবই প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক বলে পরিচিত খালের পানি পূর্ব পাশে ময়ূর নদে নিষ্কাশিত না হতে পারায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ই বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার হুমকির মুখে পড়েছে। বিগত কয়েকবছর অতিবৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অংশ জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনসহ কয়েকটি ডিসিপ্লিনের মাঠ গবেষণায় শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। রিসার্চ ফিল্ডে একটি গবেষণা কার্যক্রম একবার নষ্ট হয়ে গেলে ওই শিক্ষার্থীর শিক্ষাকোর্স সম্পন্ন করতে বিলম্ব হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই খালের উপর অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করে জনস্বার্থে খালটি ময়ূর নদের সাথে সংযোগ কার্যকর করে নিষ্কাশনে স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

আনন্দবাজার/টি এস পি

সংবাদটি শেয়ার করুন