শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটের ‘গোয়ালগাদ্দা’ আনছে বৈদেশিক মুদ্রা

সিলেটের ‘গোয়ালগাদ্দা’ আনছে বৈদেশিক মুদ্রা

দিগন্ত বিস্তৃত শিম গাছের সবুজ শামিয়ানা। দোল খাচ্ছে থোকায় থোকায় বিশেষ জাতের শিম ‘গোয়ালদাদ্দা’। মাঠে, বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় এমনকি ছাদের উপর সবখানেই শিম আর শিম। এমন দৃশ্য প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ, লক্ষণাবন্দ, লক্ষ্মীপাশা ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামে। শুধু কৃষক নয়, দেখে পথিকেরও মনজুড়ায়।

পোক্ত হয়ে ওঠা এসব শিম বিক্রি করতে কৃষকরা ক্লান্তিহীন সময় পার করছেন। বাজারজাত করতে মাচা থেকে তারা সংগ্রহ করছেন শিম। শুধু গ্রামেরই দৃশ্য নয়, সাপ্তাহিক বাজারের দিন এলে বাজারের রাস্তা-ঘাটসহ আশপাশ ভরে যায় শিমে। এ শিম শুধু স্থানীয় বাজারেই বিক্র হচ্ছে না, রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। ফলে সিলেটের গোয়ালদাদ্দা বয়ে আনছে বিদেশি টাকা। এছাড়াও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে সিলেটের শিম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ ও লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের আটটি গ্রামে গোয়ালগাদ্দা শিম চাষ হয় বেশি। একেকজন চাষি চার থেকে পাঁচবিঘা জমিতে শিমের চাষ করেন। প্রতি সপ্তাহে ৪০০ থেকে ৬০০ কেজি শিম বিক্রি করেন।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এ শিম দেশব্যাপি প্রসিদ্ধ। কীটনাশক ব্যবহার না করে শিম চাষের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ শিমের যথেষ্ট কদর রয়েছে। বেলে ও দোঁআশ মাটি শিম চাষের জন্য উপযোগী। এ অঞ্চলের মাটিতে বেলে ও দোঁআশের সংমিশ্রন থাকায় শিমের ফলন ভালো হয় এবং স্বাদও বেশি। বিশেষ করে এ অঞ্চলের ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের সুনাম রয়েছে দেশে-বিদেশে। এখানকার শিমের স্বাদ অন্যান্য জেলার শিমের চেয়ে আলাদা। এ কারণে এ এলাকার শিমের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট।

আরও পড়ুনঃ  বর্ষাকালের তুলনায় এখনো কমেনি বায়ু দূষণ

এ অঞ্চলের শিম এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হয় বিদেশেও। শীত মৌসুম আসার আগে মৌসুমী কৃষকরা শিম চাষ করে থাকেন। শীত মৌসুমে এসব শিম স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। এখান থেকে পাইকাররা প্রতিহাটে ৫ থেকে ৭ টন শিম ক্রয় করে ট্রাক, পিকআপ ভ্যানযোগে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে যায়। এছাড়া অনেকে শিম বিদেশে রফতানি করেন। এলাকার কৃষকগণ স্থানীয় পর্যায়ে শিম চাষে বরাবরের মতো এবারও ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।

উন্নত চাষ পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে শিম চাষে এ অঞ্চলের সফলতা সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানা গেছে। গত বছর মহামারি করোনার কারণে কৃষকরা তেমন শিম চাষ করেননি। তবে এবার শিম চাষ করলেও ফের করোনা বাড়ায় রফতানিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

সিলেটের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শিম বিক্রি করছেন। অন্যবারের তুলনায় এবার শিমের দাম কিছুটা বেশি বলে জানান খুচরো বিক্রেতারা। প্রতিকেজি শিম বর্তমান বাজারে পাইকরি বিক্রি ১৫-২০ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা। তবে বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে এককেজি শিমের দাম পড়ে ৫০ টাকার উপরে।

স্থানীয় এক কৃষকের কাছ থেকে শিম কিনেন ফজল মিয়া নামে এক পাইকারি বিক্রেতা। তিনি দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, প্রতিকেজি শিম কিনতে হয় ১৫ টাকায়। ক্রয়কৃত শিম সিলেট শহরে নিয়ে আসতে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা খরচ হয়ে যায়। সিলেট শহরের খুচরো বিক্রেতাদের কাছে ২০-২২ টাকা দরে প্রতিকেজি শিম বিক্রি করেন। পরে খুচরো বিক্রেতারা সে শিম বিক্রি করেন ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেজিতে ৩০ টাকা!

গোলাগঞ্জ উপজেলার মুকিতলা গ্রামের চাষি রউফ মিয়া দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, শিম চাষে বিখ্যাত তাদের এ অঞ্চল। ধান চাষ থেকে শিম চাষে লাভ বেশি। তাই এই মৌসুমে ধানী জমিতেও তিনি শিম চাষ করেছেন। শিম চাষী লতিফ মিয়া জানান, এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন এবং ফলনও ভাল হয়েছে।

বিদেশের রপ্তানির বিষয়ে পাইকার ফজল বলেন, প্রতি হাটবারে ১ হাজার থেকে ১২শ’ কেজি শিম এজেন্সির মাধ্যমে ঢাকায় পাঠান। সেখান থেকে শিমগুলো দেশের বাইরে রফতানি হয়।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, এবার উপজেলার ১০৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে প্রায় সব কৃষকেরই ভালো ফলন হয়েছে। শীত মৌসুমে পানি সেচের সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ফুলবাড়ি এলাকার একটি খাল খনন করে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হবে।

এছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের পুরকায়স্থবাজারে একটি উন্নতমানের শেড তৈরি করা হয়েছে। একই ইউনিয়নের ক্লাব পয়েন্টেও আরেকটি শেড তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সারাবছর শিম রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা সর্ম্পকে তিনি বলেন, শিম সংরক্ষণের জন্য খুব শিঘ্রই লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের ডিএম সড়কের পাশেই একটি সুবিধামূলক জায়গায় হিমাগার তৈরি করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন