শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেকর্ড সাফল্যের পথে চা

রেকর্ড সাফল্যের পথে চা

আয়তনে ছোট এবং বেশ ঘনবসতিপূর্ণ হলেও বাংলাদেশ অন্তত ১৩টি ক্ষেত্রে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে গৌরবোজ্জ্বল ও ঈর্ষণীয় অবস্থান তৈরি করেছে। এসব খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে। মহামারির মধ্যেও গেল বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ৯৬.৫০৬ মিলিয়ন কেজি (৯.৬ কোটি কেজি) চা উৎপাদিত হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বাগানমালিকরা বলছেন, চা উৎপাদনে রেকর্ড সাফল্যের পিছনে রয়েছে গত এক দশকে সরকার ও বাগানমালিকদের নেওয়া নানামুখী পদক্ষেপ। উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর এবং পার্বত্য জেলা বান্দরবানে চা চাষের পরিধি বাড়ছে। পরিত্যক্ত বাগান চা চাষের আওতায় এসেছে। কয়েক বছর ভালো দাম পাওয়ায় বাগানমালিকেরাও নতুন নতুন বিনিয়োগ করেছেন। বাগানে প্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়েছে। ২০২৫ সালে ১৪ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের সকল চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। সরকারের আর্থিক প্রণোদনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মিত মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদান, বাগান মালিক ও শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টা, সঠিক সময়ে ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চা নিলাম কেন্দ্র চালু রাখা, চা শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের ফলে ২০২১ সালে দেশের চা উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে।

মূলত, উত্তরাঞ্চলে চা চাষীদের ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে শুধুমাত্র সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকে ২০২১ সালে এর আগের বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ চা বেশি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় রেকর্ড ৯৬ জনের মৃত্যু

এছাড়া, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ছাড়াও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছরই চা উৎপাদন বাড়ছে; সেইসঙ্গে বাগানমালিকেরা এইখাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ করছে। উৎপাদন বৃদ্ধির এই প্রবণতা বজায় থাকলে বিদেশ থেকে আর বড় আকারের আমদানি করতে হবে না বলেও আশা করা হচ্ছে।

দেশে চায়ের বার্ষিক চাহিদা প্রায় সাড়ে নয় কোটি কেজি। তবে, করোনাকালের চাহিদা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় বড় ধরনের লোকসান গুণেছেন বাগান মালিকরা। লোকসান কাটিয়ে উঠতে সরকারি প্রণোদনা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে নতুন বিনিয়োগে যেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো, রেশনের ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা অর্জন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছে বাগানগুলো। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ ও অবৈধ চা প্রবেশ বন্ধ হলে দেশের চা খাত নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা করছেন বাগান মালিকরা।

মহামারিকালীন সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিভিন্ন শস্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও, চা উৎপাদন খাত ছিল ব্যতিক্রম। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ৯.১১৬ মিলিয়ন কেজি চা বেশি উপাদন হয়েছে দেশে। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলে ১৬৭ বছরের চা চাষের ইতিহাসে উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ডও এটি।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। চা চাষ শুরুর পর থেকে এতদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ চা উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ২০১৯ সালে ৯৬.৭ মিলিয়ন কেজি। তবে, ২০১৮ সালে উৎপাদন কমে ৮২.১৩ মিলিয়ন কেজিতে গিয়ে ঠেকে; একইভাবে ২০১৭ সালে চায়ের উৎপাদন ছিল ৭৮.৯৫ কেজি।

আরও পড়ুনঃ  নুসরাত হত্যা রায়ের গুরুত্ব দিয়েছে বিশ্ব গণমাধ্যম

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন