শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধানে দেশে চাল ‘মঙ্গা’

ধানে দেশে চাল ‘মঙ্গা’

চালের দেশে চাল নিয়ে চালাচালির অন্ত নেই। রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ, জয়পুরহাট ও বগুড়ায় ধান উৎপাদন বেশি হয়। এসব ধান থেকে চাল করে দেশের নানান প্রান্তে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এখানেই চালের দাম সবচেয়ে বেশি। দেশের ৮টি বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মোটা চালের দামে ২২ টাকা পার্থক্য দেখা যায়। রংপুর, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ২ হতে ৪ টাকার ব্যবধান। চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে পার্থক্য ৮ টাকা। আর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে এ ব্যবধান ২২ টাকার কম-বেশি।

রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলার সাখাওয়াত হোসেন বিপু জানান, জয়পুরহাটে ধান বেশি উৎপাদন হলেও দামও বেশি। এখানকার মানুষ মোটা চাল অর্থাৎ স্বর্ণ-৫ ৪৬ টাকা ও ৪৯ নামের চালটি ৪৭ টাকা এবং কাটারি ৬২ টাকায় বিক্রি করে। এখানকার মানুষ কাটারি চালটিই বেশি খায়। তিনি বলেন, এখানে ভয়ংকর সংকট বলতে পারেন। কেননা রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ, জয়পুরহাট ও বগুড়ায় বেশি ধান উৎপাদন হলেও এখানেই খুচরা বাজারে চালের দাম বেশি। তা ছাড়া আরেকটি দিক হচ্ছে এখানকার লোকজন ধান বিক্রি করে চাল কিনে খায়।

ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী জেলার কাজী তানভীর মাহমুদ বলেন, রাজবাড়ীতে ধানের আবাদ কম। এখানে মূলত পেঁয়াজ, পাট, শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। এখানকার ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ চাল কিনে খায়। নওগাঁ, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভারতের খাজানগরের চালে খাবার চলে রাজবাড়ীর মানুষের। পিঠাপুলির জন্য আতপ চাল কিনতে হয়। মুষ্ঠিমেয় কিছু লোক ধানচাষ করে। আমদানি নির্ভর হওয়ায় চালের দামও বেশি। সাধারণত মোটা চাল যা মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি খায় সেটির দাম ৫৫ টাকা কেজি। ময়মনসিংহের রাকিবুল হাসান রুবেল জানান, ময়মনসিংহের প্রধান খাবারই ভাত। তারপর আটা খায় কিছুসংখ্যক মানুষ। এখানে মোটা চাল ৪৮ হতে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

আরও পড়ুনঃ  দাম বাড়ছে পেঁয়াজ-আদার, বাড়তির দিকে মশলাও

সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের তানভীর আনজুম আরিফ বলেন, মৌলভীবাজারের মানুষ একটু ভিন্ন রকমের। তারা নিজেদের ধান বিক্রি করে চাল কিনে খায়। এটির গড় ৫০-৫৫ শতাংশ হবে। হয়তো মোটা ধান চাষ করলো সেটি বিক্রি করে নাজিশাইল চাল কিনে খাবে। মোটা চাল এখানে ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে। সিলেটের সব জেলাতেই ধান চাষ হয়। তার মধ্যে হাওর অঞ্চলের ধানই দেশের বৃহৎ চাহিদা মিটিয়ে থাকে বলে জানান আরিফ।

বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার এম নাজিমউদ্দিন বলেন, কৃষকের খরচ অনুযায়ী অর্থ উঠে আসে না। ফলে ধানচাষ বা কৃষিকাজ ছেড়ে পটুয়াখালীর মানুষ ইটভাটাসহ নানান কাজে ব্যস্ত। মানুষ চাল কিনে নিয়ে আসে। তবে নিজস্ব ক্ষেত-খামারীও কিছু মানুষ করে। এখানে মোটা চাল ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হয়।

রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলার আবু সালেহ বলেন, ঠাকুরগাঁও এ মোটা চাল ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে রংপুরের বিভিন্ন জেলায় ধানচাষও ভালো। খুলনা বিভাগের মোহাম্মদ মিলন জানান, খুলনাতে পাইকারি বাজারে ৪২-৪৩ এবং খুচরা বাজারে মোটা চাল ৪৪-৪৬ টাকায় বিক্রি হয়। বলেন, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় ধান বেশি উৎপাদন হয়। এসব ধান থেকে চাল বানিয়ে সারাদেশে বিক্রি করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার মাজহারুল ইসলাম অনিক বলেন, চাঁদপুরে মোটা চাল ৪৫-৪৭ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। আর সাধারণ মানুষ এখানে এটিই খাদ্য তালিকায় শীর্ষে রেখেছে।
দেশের বিভাগের বিভিন্ন জেলাতে ধান চাষের পরিমাণও কমছে। কৃষিতে লাভ কম হওয়ায় অন্য ফসলে দিকে মনোযোগ দিচ্ছে কৃষকসমাজ।

আরও পড়ুনঃ  করোনা নিয়ে গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা : আইজিপি

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন