মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অস্থির বাজারের প্রভাব

সিপিডির সংলাপ-

সিপিডির সংলাপ-

  • স্বস্তিতে নেই সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো
  • প্রকল্পের সহায়তায় আসছে বিদেশি বড় অর্থায়ন
  • চালের ভোগের সঠিক তথ্য নেই

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। অথচ সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্যে দাম বাড়ার কোনো প্রতিফলন নেই

করোনা মহামারি পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই হচ্ছে না। টেকসই না হওয়ার কারণ হলো, নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোও স্বস্তিতে নেই। করোনা মহামারির আগেও এসব সমস্যা ছিল। এখন তা বেড়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক সংলাপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সংলাপে আরো বলা হয়েছে, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। অথচ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দাম বাড়ার কোনো প্রতিফলন নেই। কারণ হতে পারে, বিবিএস যেসব পণ্যের ওপর ভিত্তি করে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) করে থাকে, সেটি অনেক পুরোনো। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের ভোগে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তাই সময় এসেছে, ভোক্তা মূল্যসূচক করার জন্য নতুন পণ্যের বাস্কেট করতে হবে। কারণ, বাজারে বর্তমানে নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যে বেশ ফারাক দেখা যাচ্ছে।

গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীতে সিপিডির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বিদেশি বড় অর্থায়ন আসছে, এটা সত্য। তবে এটা কিন্তু বাজেটের সহায়তা নয়, প্রকল্পের সহায়তা। যেহেতু এটা বাজেটের সহায়তা নয়, তাই এটা দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয় সম্ভব নয়। তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্রণোদনা হিসেবে নগদ টাকা দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  চলতি মাসেই মাঠে নামছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিম

ড. মোস্তাফিজ আরো বলেন, আমরা জানি সারের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো প্রয়োজন হবে। কীভাবে সমন্বয় করবে সরকার? আবার গ্যাসের দামও বাড়ছে। যেভাবে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে, তা দিয়ে মূল্য সমন্বয় করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা এখনো করোনা থেকে পরিত্রাণ পাইনি। অসংখ্য মানুষ করোনায় দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। তাদের নগদ টাকা দিতে হবে। আরও বলেন, প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরে এক মাসে খরচ আসে ৭ হাজার ২৯৭ টাকা। যদিও সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে আড়াই হাজার টাকা করে। নগদ টাকা আরও বেশি সময় ধরে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন।

সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনাপরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই হচ্ছে না। টেকসই না হওয়ার কারণ হলো, নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। তিনি বলেন, চালের কী পরিমাণ চাহিদা, তার মূল্যায়ন করা দরকার। দেশে চালের ব্যবহার বাড়ছে। চালের ভোগ কত? তার সঠিক তথ্য নেই। তিনি বলেন, আগের চেয়ে চালের চাহিদা বেড়েছে। চালের বাণিজ্যিক ব্যবহারও বাড়ছে। ভোগের বাইরেও চালের ব্যবহার বাড়ছে। এসব বিষয় হিসাবে আনা দরকার। ঘাটতি টানাপোড়েনের সুযোগে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কতিপয় গোষ্ঠী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  আলু হিমাগারে ঢুকেছে ১২ টাকায়, বের হচ্ছে ৩৫ টাকায়

সিপিডির মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এখন পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আহরণ করছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বাকি সময়ে ৩০ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় করতে হবে। এটা খুবই কষ্টকর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে শুল্ক ও ভ্যাট মিলিয়ে পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশের বেশি হারে আদায় করতে হবে। অন্যদিক আয়করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ২৭ শতাংশ হারে কর আসতে হবে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ রয়েছে, সেখানে কর আহরণ বৃদ্ধি করার খুব বেশি সুযোগ রয়েছে তেমনটা নয়। রাজস্ব আহরণে যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হয়, তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন বড় হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় বেশি হলে কোভিড পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের বাস্তবায়ন মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এমনিতেই এডিপি বাস্তবায়ন কম হয় সেখানে অতিমারীর সময় স্বাস্থ্য খাতের এমন এডিপি বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে যদিও আর্থিক ভারসাম্যে একটা উদ্বৃত্ত ছিল, কিন্তু সামগ্রিক ব্যালেন্সে নেতিবাচক ভারসাম্য লক্ষ্য করছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর একটা চাপ পড়ছে। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। যা বাস্তবতার সঙ্গে বিরাট ফারাক।

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন