শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বছরে বিক্রি দেড় কোটি টাকার চুন

বছরে বিক্রি দেড় কোটি টাকার চুন

জীবন চলে ২৫ পরিবারের

ঐতিহ্যগতভাবে পানের ব্যবহার অনেক আগের। যে কোন অনুষ্ঠানেই পানের ব্যবহার চলে আসছে। তবে পানের স্বাদ বাড়াতে চুনের প্রয়োজন। চুন ছাড়া পানের মজা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। পান বিলাসী মানুষদের স্বাদ বাড়ানো চুন তৈরি করেই জীবিকা অর্জন করছে রাজশাহীর মোহরপুর উপজেলার একটি গ্রামের ২৫ পরিবার।

চুন তৈরির কারিগররা পরিচিত ভুঁইমালী নামে। চুন বানানো তাদের বংশ পরম্পরার পেশা। মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার বাকশৈল গ্রামের ২৫ পরিবারই খাবার চুন তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। চুন তৈরির সাঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রামের ২৫টি পরিবারের মধ্যে ২০টিতে প্রতিদিন চুন তৈরি করা হয়। বাকি ৫টি পরিবারে সপ্তায় তিন থেকে চারদিন চুন তৈরি হয়।

একটি বাড়িতে দিনে ১০০ থেকে ১২০ কেজি চুন তৈরি হয়। দিনে কমপক্ষে ১০০ কেজি চুন তৈরি হলে ১৫টি বাড়িতে প্রতিদিন এক হাজার ৫০০ কেজি চুন তৈরি হয়। মাসের হিসেবে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার কেজি (৪৫ মেট্রিক টন)। ৩০ টাকা কেজি দরে চুন বিক্রি হয়। সে হিসেবে মাসে চুন বিক্রি দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর এক বছরের হিসেবে চুন বিক্রি দাঁড়ায় ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

ভুঁইমালীদের একজন জামাল উদ্দিন। যিনি প্রতিদিন স্থানীয় পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, ডোবা থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করেন। আর সে ঝিনুক পঁচানোর পর শুকিয়ে খাওয়ার চুন হিসেবে প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করে থাকেন। আর চুন তৈরির আয় থেকে চলে তার ৫ সদস্যের পরিবার। মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার বাকশৈল গ্রামের মৃত কুরু মালীর ছেলে প্রদীপ মালী বাড়িতে চুন তৈরি করেন। চুন বানানো তাদের বংশ পরম্পরার পেশা।

ছোট ছোট করে কাটা জ্বালানি কাঠের টুকরো বিছিয়ে তাতে কেরোসিন তেল ঢালা হয় আগুন জ্বালানোর জন্য। চুন তৈরির চুলাটি দেখতে ছোট্ট ক‚পের মতো। চুলার তলদেশে প্রথমে বিছিয়ে দেয়া হয় ইট। পরে ইটের উপরে সাজানো হয় মাটির তৈরি ভাঙা পাতিলের টুকরা। কাঠে আগুন ধরে গেলে ধোঁয়া ওঠা চুলায় ঢালা হয় ঝুড়ি ঝুড়ি শামুকের খোসা। শামুকের পরতের উপরে আবার বিছানো হয় জ্বালানি কাঠ, তার উপর আবারও শামুক। জ্বালানি কাঠ আর শামুকের খোসায় চুলা ভরে গেলে নিচের গর্ত দিয়ে দিতে হয় একটানা বাতাস। বাতাস পেয়ে জ্বালানি কাঠের আঁচে স্তরে স্তরে পুড়তে থাকে শামুকের খোসা। আগুনের তাপে শামুকের খোসার ক্যালসিয়াম, কার্বোনেট ভেঙে তৈরি হয় ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা কুইক লাইম। পুড়ে যাওয়া খোসার কুঁড়ো চালুনি দিয়ে চেলে এরপর ঢালা হয় পরিষ্কার এক গর্তে। পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে ভালো করে ঘুঁটলে তৈরি হয় ক্যালসিয়াম হাইড্রো অক্সাইড নামের চুন।

এভাবে ৫০ কেজি পোড়ানো গুঁড়া শামুক ও ঝিনুকের সঙ্গে পানি মিশিয়ে তা থেকে প্রায় ১৫০ থেকে ১৮০ কেজি চুন পাওয়া যায়। ধবধবে সাদা করতে চুনের সঙ্গে বিচি কলার রস মেশাতে হয়। এরপর তা জালের মাধ্যমে ছেঁকে বিভিন্ন হাঁট-বাজারে বিক্রয়ের উপযোগী করা হয়। এসব চুন ব্যবহার করে মাছ চাষের জন্য ঘের ও পুকুর প্রস্তুত করা হয়। পানের সঙ্গেও খাওয়া যায়। এছাড়া ঘরের দেয়াল চুন-কাম করতেও ব্যবহৃত হয় এ চুন।

আরও পড়ুনঃ  তিন লাখ টাকায় বিক্রি হলো ৩৭ কেজি ওজনের ‘কালা পোপা’

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন