শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রফতানি খাতে সম্ভাবনাময় খেলনা শিল্প

রফতানি খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার মুখ দেখাচ্ছে দেশীয় খেলনা শিল্প। শ্রমঘন এই শিল্প খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে রফতানি ক্ষেত্রে অনেক খাতকে টপকে যেতে পারবেন।

দেশে শ্রমিকের মজুরি কম হওয়ায় ও সস্তা শ্রমের কারণে বিদেশি খেলনা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে যেমন কারখানা স্থাপন করেছে তেমনি অনেক দেশই আগ্রহ দেখাচ্ছে বিনিয়োগ করতে।

বর্তমানে দেশীয় পর্যায়ে দেড় হাজার ধরণেরও বেশি খেলনা বানানো হচ্ছে। দেশে খেলনা শিল্পখাতে রয়েছে প্রায় ১৫০টি কারখানা। প্লাস্টিকের পুতুল থেকে নানান ধরনের গাড়ি, ফিশিং গেম, গিটার, রাইফেল, অ্যাম্বুলেন্স, মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের খেলনা দেশেই তৈরি হচ্ছে। সম্ভাবনাময় এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাব জড়িত রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

দেশীয় কারাখানায় উৎপাদিত উন্নতমানের খেলনা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বহু দেশে রফতানি হচ্ছে। টয় মার্চেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশ থেকে প্রায় তিনশ কোটি টাকার খেলনা বিদেশে যাচ্ছে।

আর্থিক হিসাবে সব মিলিয়ে খেলনা শিল্পের সার্বিক বাজার ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। ২০১৫ সালে খেলনার বিভিন্ন উপকরণে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এসময় শর্ত সাপেক্ষে যাবতীয় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি জারি করা প্রজ্ঞাপন কার্যকরী হওয়ায় আগের এ নিয়ম বাতিল হয়েছে।

সংশ্লিষ্টখাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কয়েক বছর আগে প্লাষ্টিক খেলনার প্রায় সবটাই চীন থেকে আমদানি হতো। বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতি সহায়তা এবং দেশি উদ্যোক্তাদের চেষ্টায় বড় অংশ বাংলাদেশে তৈরি খেলনা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বর্তমানে ৯৫ শতাংশ খেলনা তৈরি হচ্ছে দেশীয় কারখানায়।

আরও পড়ুনঃ  পানি সংকটে পাট জাগে দুশ্চিন্তা

তবে সরকার সবসময় দেশীয় উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করে এলেও সম্প্রতি আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা। ব্যবসায়ীরা আরো বলছেন, দেশি প্লাস্টিক শ্রমঘন শিল্প। এ খাতে বর্তমানে সংকট দেখা দিচ্ছে।

তবে সরকারের সহযোগিতা পেলে খেলনা শিল্প বর্তমান অব্স্থান থেকে আরো বড় খাতে পরিণত হবে বলে মনে করছেন এ শিল্পের মালিকরা। তারা বলছেন, এখাতের ওপর ভর করে গড়ে উঠা অনেক লিংকেজ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকার সহযোগিতা করলে এ শিল্প টিকে থাকতে পারবে।

গেল ২০১৪ সাল থেকে রাজধানীর চকবাজারে বিভিন্ন ধরনের খেলনা প্রস্তুত করে আসছে আমান প্লাস্টিক টয়েস ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রায় দুই হাজার কর্মী এখানে কাজ করেন। তিলে তিলে গড়া তোলা নিজের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. আমান বলেন, সরকারের সহযোগিতা পেয়েই এতদিন দেশি প্লাস্টিক খেলনা শিল্প টিকে থাকছে। তবে আরোপিত শুল্কে বিপাকে পড়তে হবে।

দেশের শহর-গ্রাম-মফস্বলে যেসব স্বল্পমূল্যের প্লাস্টিকের খেলনা বিক্রি হয়, কয়েক বছর আগেও সেসব খেলনার প্রায় পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। তবে গেল কয়েক বছরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে খেলনা তৈরির হার দিন দিন বাড়ছে। খেলনা তৈরির প্রসারতায় বাড়ছে এর কাঁচামাল আমদানির পরিমাণও। তবে আগামীতে দেশীয় খেলনা বিদেশি রফতানি করে প্রচুর বৈদেশি মুদ্র দেশে আসতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

মূলত, শিশুর মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম ‘খেলনা’। তাদের মন ভালো রাখার পছন্দসই উপকরণ। সন্তানের প্রয়োজনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। বর্ধিত এ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ এক সময় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর ছিল। তবে দেশের প্লাস্টিক খেলনার প্রায় সবই আগে চীন থেকে আসতো। বর্তমানে সেই নির্ভরতা কমে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ইতালি ফেরত ১২৫ বাংলাদেশীকে নেয়া হয়েছে হজ ক্যাম্পে

সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে তৈরি খেলনার বড় বাজার তৈরি হয়েছে বিদেশে। উদ্যোক্তদের মতে, দেশীয় খেলনা শিল্প আগামীতে শুধু চীন নয়, অনেক উন্নত দেশকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারে।

আনন্দবাজার/এজে

সংবাদটি শেয়ার করুন