শীতকালীন সবজি চাষ করে এবার ভালো নেই লালমনিরহাটের কৃষকরা। বাজারে মুলা, বেগুন ও ফুলকপির কোন ক্রেতা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। বাধ্য হয়ে প্রতি কেজি মুলা দেড় টাকা, বেগুন ৭ টাকা আর প্রতি পিছ ফুলকপি ২ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মুলার কোন ক্রেতা না থাকায় রাস্তার পাশে, জমির আইলে পড়ে আছে শত শত মণ মুলা। আর বাজারে চাহিদা কম থাকায় ক্ষেত্রেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বেগুন। এমনকি এলাকায় ফুলকপির চাহিদা না থাকায় বাহির থেকে পাইকাররা এসে প্রতিপিছ ফুলকপি দেড় থেকে ২ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারগুলোতে।
![](https://dainikanandabazar.com/wp-content/uploads/2020/12/Lalmonirhat-Agriculture-News-Pic-5-31.12.2020.jpg)
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কতটুকু জমিতে মুলা, বেগুন বা ফুলকপি চাষ হয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই কৃষি বিভাগে। তবে লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার কৃষকরা ব্যাপক ভাবে মুলা, বেগুন ও ফুলকপি চাষ করে এবার আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার হাড়িভাঙ্গা এলাকার কৃষক মজমুল হক জানান, এ বছর ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে ২ একর জমিতে মুলা চাষ করেছেন তিনি। প্রথমের দিকে প্রায় ১০ হাজার টাকার মুলা বিক্রি করতে পাললেও পরবর্তীতে আর মুলা বিক্রি করতে পারেননি। কারন মুলা জমি থেকে তুলতে যে পরিমান শ্রমিক খরচ দিতে হয় সে টাকা মুলা বিক্রি করে পাওয়া যায় না। তাই ক্ষেত থেকে মুলা না তুলে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে মুলাক্ষেত নষ্ট করছেন। অপর দিকে বেগুন চাষী শাহ আলম জানান, বেগুনের দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম থাকায় আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে বেগুন বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এর ফলে তার ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বেগুন। এখন বেগুনের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
![](https://dainikanandabazar.com/wp-content/uploads/2020/12/Lalmonirhat-Agriculture-News-Pic-4-31.12.2020.jpg)
আর একই উপজেলার মোগলহাট এলাকার ফুল কপি চাষী আনোয়ার হোসেন জানান, ৮ দোন জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন তিনি। তিন দোন জমির ফুল কপি প্রতি পিছ ১২ টাকা করে বিক্রি করেছেন। কিন্তু হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় এখন প্রতি পিছ ফুলকপি ২ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামীম আশরাফ জানান, যেকোনো ফসল ফলানোর আগে চাহিদার বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। কিন্তু কৃষকরা সে বিষয়ের দিকে খেয়াল না রাখার কারনে এবার সবাই শীতকালীন একই সবজি বেশি করে চাষ করেছেন। ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এখানকার কৃষকরা।
আনন্দবাজার/শাহী/সমাপ্ত