বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলু হিমাগারে ঢুকেছে ১২ টাকায়, বের হচ্ছে ৩৫ টাকায়

বাজারে অন্য সবজির দাম যখন লাগামছাড়া, তখন আলুই ভরসা। এখন সেই আলু কেনারও জো নেই। দাম ব্যাপক চড়া।

দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৭০-৭৫ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবজিপণ্যটির উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ টনেরও বেশি। উদ্বৃত্ত উৎপাদন সত্ত্বেও কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে আলুর বাজারে। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে সবজিপণ্যটির দাম। অথচ সেই আলুই উৎপাদন মৌসুমে এক-চতুর্থাংশ দামে কৃষকের কাছ থেকে কিনেছিলেন হিমাগার মালিক ও মজুদদার ব্যবসায়ীরা।

মৌসুম শুরুর পর বাজারে আলু সাধারণত ২০ টাকা কেজির মধ্যে থাকে। শীতের আগে যখন মজুত শেষের দিকে থাকে, তখন প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা। এবার প্রবণতা ভিন্ন। গত মার্চে যে আলু হিমাগারে ঢুকেছিল, চার মাস পেরোতেই সেটা কেজি প্রতি ৪০ টাকায় উঠে গেছে। নতুন মৌসুমের আলু পুরোদমে বাজারে আসতে আরও পাঁচ মাস বাকি।

দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের উৎপাদন মৌসুমে তারা প্রতি কেজি আলু ১২-১৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। সেই আলু কিনে মজুদ করেন হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা, যা এখন হিমাগার গেটে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকার বেশি দামে। ৬০ কেজির এক বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণে তাদের খরচ পড়ে ১৮০-২২০ টাকা। ক্রয়মূল্য, হিমাগার খরচ ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি বস্তা আলুতে মোট খরচ হয় ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। কিন্তু সেই আলু এখন ২ হাজার ১০০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি করছেন হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুনঃ  এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ধানের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা

আলুর দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেয়ায় ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ বছর আলুর বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা। এক কেজি আলুতে ২০ টাকা লাভ করছেন তারা। বাজারে চাহিদা বাড়াতে এবং নানা কারসাজির ফলে দাম নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন একটা কাজ। কিন্তু আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকায় নেই।

হঠাৎ বাজার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠায় হিমাগার ও খুচরা বাজারে আলুর দাম নির্ধারণ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম)। সরবরাহে কৃৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিমুনাফা হাতিয়ে নেয়া রোধ করতেই দাম নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

ডিএএমের তথ্য অনুসারে, মৌসুমে কেনা দাম, হিমাগার ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি কেজি আলুর পেছনে খরচ পড়ে ১৮ টাকা ৯৯ পয়সা। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা দামে বিক্রি করলেও লাভবান হতে পারেন হিমাগার মালিকরা। ফলে হিমাগার পর্যায়ে ২ থেকে ৫ শতাংশ মুনাফা যোগ করে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ মুনাফা যোগ করে ২৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ মুনাফা যোগ করে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা বেঁধে দেয়া হয়েছে প্রতি কেজি আলুর দাম।

চলতি বছর দীর্ঘমেয়াদি বন্যা থাকায় দেশের অধিকাংশ জেলায় সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে সব ধরনের সবজির দাম চড়া। এ অবস্থায় সবজি হিসেবে আলুই ছিল নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা। কিন্তু এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পণ্যটির বাজার অস্থির করে তুলেছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

আরও পড়ুনঃ  চলতি বছর ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে একুশে বইমেলা

বাজার গবেষকরা বলছেন, আলুর দামের অর্ধেকের বেশি পাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। মজুদ সক্ষমতা না বাড়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। তাই উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক পর্যায়ে মজুদ সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত শিল্পে আলুর বিকল্প ব্যবহার বাড়াতে হবে।

কৃষিপণ্যে ব্যবসায়ীরা কী মাত্রায় মুনাফা করবেন, সে বিষয়ে সঠিক তদারকি নেই। ব্যবসায়ীদের অনৈতিক মুনাফার কারণে উৎপাদকরা যেমন লোকসান দিচ্ছেন তেমনি ঠকছেন দেশের ভোক্তারাও। তবে আলু নিয়ে কোনো ব্যবসায়ী অতিমুনাফা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিযোগিতা কমিশন-সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আলুর বাজার অস্থির করার পেছনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেই হিমাগার মালিকরা বলছেন, ২০১৯-২০ মৌসুমে আলু উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। উৎপাদিত আলুর ৪০ লাখ টন হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ আলু হিমাগারগুলো থেকে বের করা হয়েছে। এছাড়া বাকি আলু থেকে প্রায় ৮-১০ লাখ টন বীজআলু হিসেবে রাখতে হয়। এখন এসব আলু যদি চলে যায় তাহলে সামনের দিনে উৎপাদন বাড়ানো অসম্ভব হবে।

আনন্দবাজার/এফআইবি

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন