বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে বন্যায় লোকসানের হিসাব কষতেই দিশেহারা কলা চাষিরা

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা ও পাশ^বর্তী নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কূল ঘেঁসে বয়ে যাওয়া পুরাতন ব্রহ্মপুএ নদের চর এলাকায় কলা চাষ করেন কৃষকরা। বন্যায় এসব কলা গাছের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। মুখ থুবরে পড়েছে প্রান্তিক কৃষকদের অর্থনীতি। বন্যায় লোকসানের হিসাব কষতেই দিশেহারা কলা চাষিরা। এত করে তাদের মাথায় হাত পড়েছে।

এদিকে অনেক কলাগাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। প্রায় অধিকাংশ কলাগাছ বন্যার পানিতে ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে ডুবে থাকার কারণে গাছের গোড়া পচেঁ গেছে। এতে করে ওই গাছ থেকে আর ফলন আসা সম্ভব নয়।

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ব্রহ্মপুএ নদের বুকে চর খিরাটী এলাকার কলাচাষী মোঃ দুলাল মিয়া (৬০) দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, দুই একর জমিতে আমার সবরি ও সাগর কলার বাগান। সাড়ে পাঁচ হাজার কলাগাছ লাগিয়ে ছিলাম। এবারের বন্যায় পানিতে ভেসে গেছে অন্তত ৪০০ কলাগাছ। নষ্ট হয়েছে আরোও অন্তত ২০০। বাকি যে গুলো আছে তার মধ্যে অধিকাংশরই গোঁড়া পচেঁ গেছে। বিশেষ করে কলা ধরেছে যে গাছ গুলোতে সেগুলোর গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে। এর ফলে গাছে থাকা কলাগুলো গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বন্যার পানি জমিতে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার কারণে কলা চাষিদের ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়ে গেছে।

একই এলাকার কলা চাষি মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, এক একর জমিতে দুই হাজার ৫০০ কলাগাছ লাগিয়েছিলাম। কিন্তু এবারের বন্যায় আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম সেটা তুলতে হিমশিম খেতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  আরও বাড়লো স্বর্ণের দাম

এদিকে প্রতিটি কলাগাছের পেছনে আমাদের খরচ হয় প্রায় ১০০ টাকার মতো। ফলন ভালো হলে প্রতিটি গাছ থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার কলা বিক্রি হয়। প্রতি মৌসুমে চরে কলার চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হলেও এবারের বন্যায় বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ে গেলাম।

তিনি আরো বলেন,কাপাসিয়ায় উপজেলার শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুএ নদের চর এলাকায় অন্তত ২০০টিরও অধিক কলা বাগান আছে। প্রত্যেকটি বাগান গড়ে ১ থেকে ৩ একর জমির উপর। এদিকে শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুএ নদের চরে উৎপাদিত কলা গাজীপুর ও নরসিংদী এই দুই জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এখানে কলা চাষের সঙ্গে জড়িত আছে ২ হাজারের বেশি কৃষক। কাপাসিয়া উপজেলায় এ বছর কলা চাষ করা হয়েছিল ৭১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ২৯ মেট্রিক টন। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির কারণে কলা বাগানের গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই এবার এই উৎপাদন লক্ষমাত্রা আশা করা যাচ্ছেনা।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, কাপাসিয়া উপজেলার চর খিরাটী, সিঙ্গুয়া,খিরাটী,চরণীলক্ষী,সনমানিয়া,বারিষাব,ঘাগটিয়া এসব এলাকার কলা চাষীরা সৃষ্ট বন্যা কারণে তাদের চাষকৃত কলা বাগানের ক্ষতির পরিমাণ এতই বেশি হয়েছে যে, এখন লোকসানের হিসাব কষতেই এসব কলা চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভখাঁ গ্রামের কলা চাষি আব্দুর রশিদ বলেন, এ বছর কলা চাষ করে আমাদের মাথায় হাত। বন্যার কারণে কলা চাষ করে বড় ধরণের লোকসানে পড়েছি। গত বছর দুই একর জমিতে কলা চাষ করে ৩ লাখ টাকা আয় করেছিলাম। আর এই বছর আসল টাকা তুলতে পারবো কিনা সন্দেহ।

আরও পড়ুনঃ  বাজারে ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বশাক ‘দৈনিক আনন্দবাজারকে’ জানান, করোনা এবং বন্যা পরিস্থিতির কারণে যে সব কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রনোদণা প্রদান করা হতে পারে। অন্যদিকে যে সকল কৃষকের আমন ধানের বীজতলা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে তাদেরকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমন ধানের বীজ এবং বীজ থেকে গজানো চারা গাছ বিতরণ করা হবে। যাতে করে ওই সকল কৃষকেরা তাদের ক্ষতি পরিমাণটা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারে।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন