শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিক্রি নেই দোকানেই নষ্ট হচ্ছে পণ্য, পথে বসার উপক্রম হাজারো ব্যবসায়ীর

মোতাহের হোসেন। ব্যবসা করেন রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায়। করোনার সংক্রমন রোধে সরকারেরও দেওয়া সাধারণ ছুটির সময় ব্যবসা বন্ধ করে চলে যান গ্রামে।  এতদিন ব্যবসা বন্ধ থাকায় সঞ্চয়ের টাকায় চলেছে তার পরিবার। সঞ্চয়ের টাকা হারিয়ে দোকানে থাকা পণ্য দিয়েই আবারও শুরু করে ব্যবসা করলেও এ ব্যবসা যেন নামেই ব্যবসা। সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে এলেও দেখা মেলে না কোনো ক্রেতার। এমন অবস্থায় দোকানের অন্যান্য খরচ মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তার। 

শুধু মোতাহের হোসেন নয়, অনেক ব্যবসায়ীর অবস্থা এখন এমনই। আর তার চেয়ে ছোট ব্যবসায়ী যারা, তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। অনুসন্ধানে রাজধানীর নিউ মার্কেট, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, মেট্রো শপিং, স্টার্ন প্লাজাসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ও বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১২-১৫ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে জুতা ব্যবসায়ী, পাঞ্জাবি, বোরকা, প্যান্ট-শার্ট, ঘড়ি, হাঁড়ি-পাতিল ও গৃহস্থালি জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী।

সরজমিনে এসব মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতারা অবসর সময় পার করছেন। এমনকি বসুন্ধরা শপিংমল যেখানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে, সেখানেও দেখা মেলে না ক্রেতার। এসব দোকানে আগে ৪-৫ জন করে কর্মচারী কাজ করতো। এখন সেখানে একজন মাত্র বিক্রয় কর্মী কাজ করছেন।

ফ্যাশন জোনের ওহাব উদ্দিন জানান, গত ঈদ ও পহেলা বৈশাখে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। এখনো ক্ষতির মধ্যেই রয়েছি। দোকানে বিক্রি হবে, আবার মাল উঠাবো এটিই সিস্টেম। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই, বিক্রিও নেই। ব্যবসা বন্ধ থাকায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুষিয়ে উঠবে কীভাবে?

আরও পড়ুনঃ  ঈদ যাত্রীদের ঢল

দীর্ঘ বন্ধের পর খুলেছে রাজধানীর মার্কেট, শপিংমল ও বিপণি বিতান। খুলেছে ছোট-বড় দোকানপাট। তবেক্রেতাশূন্য মার্কেটে গল্প গুজবে দিন কাটে ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে বেশি দৈন্যতায় রয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। এসব ব্যবসায়ীরা ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক ব্যবসা করতে পারেন নি। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।

ঈদুল ফিতরের পর সীমিত পরিসরে ব্যবসায় ফিরলেও ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দোকানপাট খোলা হলেও নেই আগের মতো বেচা-বিক্রি। এতে লাভ তো দূরের কথা বরং প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছ। অন্যদিকে অর্থিক সংকটে চাহিদা অনুয়ায়ী দোকানে পণ্য উঠাতে পারছেন না। ফলে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতনসহ ইত্যাদি খরচ নিয়েই চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। শহরে টিকতে না পেরে চলে গেছেন গ্রামে।  সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় ব্যাংক থেকেও ঋণ পাচ্ছেন না। যদিও ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠনগুলোর সুপারিশও রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকে ধর্না দিয়েও মিলছে না কোনো প্রকার অর্থ।  তবে বিকল্পভাবে হলেও ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। অন্যথায় দেশের আর্থসামাজিক অবস্থায় আরো বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দেয়া তথ্য মতে, সাধারণ ছুটিতে দোকানপাট বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা গত ৬৪ দিনে (২৬শে মার্চ থেকে ৩০শে মে) লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। শুধু পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মাটির হাঁড়ি, মিষ্টি, পোশাকসহ দেশের বাজারের জন্য শতভাগ পণ্য তৈরি করে এমন ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ আরো ৬ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুনঃ  কোরবানীর হাট কাঁপাবে ময়না

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন  বলেন, বর্তমানে সবচেয় খারাপ অবস্থায় রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দেশে প্রায় ৬০ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে অনেকে ফেরি করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করেন। রাস্তায়-ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করেন। এদের পুঁজির পরিমাণ বেশি হলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে গত ৩-৪ মাস বসে থেকে তাদের পুঁজিও খেয়ে ফেলেছে। এখন এই ৬০ লাখ পরিবার কী করছে? তারা তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। কাজকর্ম নেই হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে যদি তাদের পুঁজির ব্যবস্থা না হয় তাহলে তারা কাজে ফিরতে পারবে না। আর এই মানুষগুলো কাজে না ফিরলে দেশে সামাজিক নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।এজন্য তারা যেন সহজে আর্থিক সহায়তা পায় সেজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন