শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আখাউড়ায় মাল্টার বাম্পার ফলন

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। ফলন ভালো প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে বাগান সংখ্যাও। এ মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ায় মাল্টার ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা খুবই খুশি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় ১৭ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১ হেক্টর বেশি। এ উপজেলায় প্রায় ২শ’ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এদিকে স্থানীয় বাজারে মাল্টা বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে।

এখানকার মাল্টার গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিদিন খুচরা বিক্রেতারা বাগান থেকে মাল্টা ক্রয় করে প্রতিকেজি ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। বাগান মালিক থেকে তারা পাইকারিতে প্রতিকেজি মাল্টা ৭০-৮০ টাকায় ক্রয় করছেন। স্থানীয় বাজারে মাল্টার ভালো চাহিদা থাকায় বিক্রিতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বারি এ উপজেলায় -১,বারি-২ জাতের মাল্টা বেশী চাষ করা হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় ফলটি রয়েছে খুবই সুস্বাদু। মাল্টা গাছে সাধারণত ফেব্রæয়ারি মাসে ফল ধরে, এবং এটি পরিপক্ক হয় সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। ফুল আসা থেকে শুরু করে ফল পাকতে সময় লাগে প্রায় ৬ মাস। এরপর এটি বাজার জাত করা হয়। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ১০০ গাছ লাগানো যায়। এক ফুট
বাই এক ফুট গর্ত করে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ১০ দিন ফেলে রেখে গাছ রোপণ করতে হয়। মাল্টা গাছ রোপণের তিন বছরের মাথায় ফল পাওয়া যায়। প্রতি গাছ থেকে ১৫-২০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ  ঘোষণা ছাড়াই বাড়ল চিনির দাম

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২০১৫ সালের দিকে প্রথম মাল্টার চাষ শুরু হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহযোগিতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিবছর এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাাল্টার উৎপাদন

বৃদ্ধিতে ছোট বড় ও মাঝারি কৃষকদের প্রয়োজনীয় উপকরণসহ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে পৌর শহরের দুর্গাপুর, উপজেলার আখাউড়া উত্তরের চানপুর, আজমপুর, আনোয়ারপুর, কল্যাণপুর, দক্ষিনের হীরাপুর, কালিনগর, মোগড়া, মনিয়ন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাগানের গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় মাল্টা। বিকিকিনিতে চাষিরা এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় খুচরা মাল্টা বিক্রেতা মলাই মিয়া বলেন, মৌসুম অনুযায়ী সারা বছর নানা প্রকারের ফল বিক্রি করছেন। গত প্রায় ২০ দিন ধরে তিনি বাগান থেকে মাল্টা ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করছেন। এখানকার মাল্টা খুবই সুস্বাদু হওয়ায় দৈনিক ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার উপর বিক্রি হয়। এতে দৈনিক তার ৭শ থেকে ৮শ টাকা উপর আয় হচ্ছে।

উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের কৃষক মো.আলমগীর হোসেন বলেন, কাঁঠাল, পেয়ারা লিচুসহ নানা জাতের ফল মৌসুমী ফল চাষ করছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি পর্যায়ক্রমে ৩ বিঘা জমিতে বারি-১ জাতের ২০০টি মাল্টা গাছ রোপন করেন। রোপনের ৩ বছরের মাথায় তার গাছে
আশানুরূপ ফলন আসে। বর্তমানে তার বাগানে প্রতিটি গাছে নিচে ৯০-১০০টি করে মাল্টা ঝুলে আছে। গত ২০ দিন ধরে চলছে বিক্রি। এ পযর্ন্ত প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি হয়েছে। গাছে যে পরিমাণ মাল্টা রয়েছে আরো ৫০ হাজার টাকার উপর বিক্রি হবে। গত মৌসুম থেকে এবার ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি। তিনি আরো বলেন এ পরিমাণ জায়গাতে যদি ধান চাষ করা হতো তাহলে ৪০ হাজার টাকার বেশী ফলন পাওয়া যেতো না।

আরও পড়ুনঃ  উত্তরে পেঁয়াজ সংকটে ঝাঁজ দ্বিগুণ

উপজেলার মিনারকোট গ্রামের মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, বাড়ি সংলগ্ন জায়গাতে ২২০টির মত মাল্টা গাছ রয়েছে। যার প্রতিটি গাছের থোকা থোকা মাল্টা ধরে আছে। গাছে ফলের আকার ভালো হওয়ায় ৪-৫টি মাল্টা ১ কেজি ওজন হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আরো বলেন প্রতিনিয়ত গাছে বিভিন্ন ধরণের পোকা মাকড় থেকে রক্ষা পেতে সপ্তাহে ১ বার স্প্রে করা হয়।

প্রতি গাছে নিচে ১৫-১৭ কেজির উপরে মালটা ধরেছে। বাগানের বেশীভাগ মাল্টা স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পাইকাররা ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছেন। পাইকারিতে প্রতিকেজি মাল্টা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানায়। এ পযর্ন্ত বাগানের অর্ধেকের বেশী মাল্টা বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক ফলন ভালো হওয়ায় ২ লাখ টাকার উপর মাল্টা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

কসবার পাইকার মো: সিরাজ মিয়া বলেন, গত প্রায় ১২ বছর ধরে মৌসুমী নানা প্রকারের ফল বিক্রি করছেন। এলাকার মাল্টা স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় বিক্রিতে ভালো লাভ হয়। তাই মৌসুমের শুরু থেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাগান মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাল্টা ক্রয় করে বিক্রি করছেন। এ মৌসুমে মাল্টার ভালো চাহিদা রয়েছে। বিক্রিতে ভালো লাভবান হচ্ছেন বলে জানায়।

উপজেলার উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান বলেন, আমাদের এলাকায় আগে মাল্টা চাষাবাদ তেমন ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে বানিজ্যিক ভাবে চাষা হচ্ছে। এলাকায় প্রতিটি মাল্টা বাগানে দৃষ্টি নন্দন মাল্টা ধরেছে। ফলন ভাল হওয়ায় মাল্টা আবাদ ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। লিচু,কাঁঠাল ও পেয়ারার পর এবার বানিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষে নিজেদের ভাগ্য বদল করার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা ।

আরও পড়ুনঃ  শীর্ষ করদাতার পুরস্কার পেলো এবি ব্যাংক

উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মাজহারুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ রসালো ফল মাল্টা। ফলটি খেতেও যেমন সুস্বাদু, তেমনি রয়েছে এর রয়েছে নানা উপকারিতা। শরীরের বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে রক্ষা করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ ফলটি। ফলটি মূলত পাহাড়ী অঞ্চলে চাষ হলে ও বর্তমানে সমতল ভূমিতে চাষ করছেন কৃষকরা। এখানকার মাটি মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই দিন দিন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের আবাদ কৌশল ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে চাষীদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অল্প খরচে লাভবান হওয়ায় ক্রমাগতভাবেই মাল্টা চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন