শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফাটা ডিম এখন সোনার হরিণ

ফাটা ডিম এখন সোনার হরিণ

নিম্নআয়ের মানুষের কাছে মাংস হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ডিম যেন বর্তমানে সোনার হরিণ। পাইকারি বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতি হালি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। আর খুচরা দোকান থেকে একহালি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫২ টাকা। ডিমের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় কম দামে ফাটা ডিম কিনতে শুরু করেছেন নিম্নআয়ের মানুষ। তবে, সেই ফাটা ডিমও এখন গলার কাঁটা। ৪০ টাকার নিচে বাজারে একহালি ফাটা ডিম পাওয়া যাচ্ছে না।  

জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা রেলবাজারে পাইকারি ডিমের দোকানগুলোতে ফার্ম থেকে ডিম সরবরাহের সময় প্রতিদিনই কিছু ডিম ফেটে যায়। হালকা ফেটে যাওয়া এ ডিমগুলো পাইকাররা কম দামে বিক্রি করে থাকেন। এ এলাকার নিম্নআয়ের মানুষেরা এ ফাটা ডিমগুলো কিনে দেহে আমিষের চাহিদা পূরণ করেন।

রেল বাজারে বেশ কয়েকটি পাইকারি ডিমের দোকান। এরমধ্যে অন্যতম বড় ডিমের আড়ৎ কালাম ডিম হাউজ। গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে ডিম এখানে আসে। এর মধ্যে পরিবহনের সময় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ ডিম ফেটে যায়। মূলত কিছুসংখ্যক নিম্নআয়ের মানুষ, ছোট বেকারি ও ছোট ফার্স্টফুড রেস্টুরেন্ট দোকানিরাই এ ফাটা ডিমগুলো কেনেন।  

পাইকার ডিম বিক্রেতা মোহাম্মদ কালাম বলেন, আমি দিনে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার ডিম বিক্রি করি। এর মধ্যে অন্তত ২০০ ফাটা ডিম বিক্রি হয়। নিম্নআয়ের মানুষ ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর দাম শুনে ফাটা ডিমই কেনে। যখন ডিমের দাম কম ছিলো তখন ফাটা ডিম ৫ থেকে ৬ টাকা পিচ বিক্রি করতাম, তবে বর্তমানে ডিমের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বেশি ও লোকসান কমাতে প্রতিপিচ দশ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।  

আরও পড়ুনঃ  পণ্য কারসাজির কুনজরে রসুন

দোকানে ডিম কিনতে আসা গফুর আলী বলেন, মাছ, মাংসের দাম অনেক, সেগুলো আমাদের সাধ্যের বাইরে। আমরা নিয়মিত ডিম খেতাম। তবে, ডিমের যে দাম তাতে ভালো ডিম কেনা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আগে একটা ডিম কেটে ২ ভাগ করে রান্না করে খেতাম। ১২/১৩ টাকা করে ডিম কেনার অবস্থা আমাদের নেই, তাই ফাটা ডিম কিনতে হচ্ছে। তবে, তার দামও পড়ছে প্রতিপিচ ১০টাকা। এখন আমরা কি খাবো?  

ফুটপাতে ভাজাভুজি বিক্রেতা হোসেন মিয়া বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। বাজারে ২০০ টাকার নিচে মাছ পাওয়া যায় না। আর আমাদের মতো মানুষের মাংশ কেনার সামর্থ নেই। সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন ডিম খায়। কিন্তু ডিমের দাম বেশি হওয়ায় এখন ফাটা ডিম কিনতে হচ্ছে।

একটি ফার্স্টফুড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার তুহিন আহমেদ বলেন, একটা ফার্স্টফুড রেস্টুরেন্টে ডিমের ব্যাবহার বেশি হয়। আগে আমরা ফ্রেশ ডিম কিনিতাম। ডিমের দাম বেশি হওয়ায় আগের তুলনায় এখন প্রোডাকশন খরচ বেড়ে গেছে। ব্যয় ঠিক রাখতে বর্তমানে ফাটা ডিম কিনতে বাধ্য হচ্ছি। ফাটা ডিমও এখন ৩০০ টাকা পাতা(খাচি)। 

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন