শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাইকারি-খুচরায় বিশাল ফারাক

পাইকারি-খুচরায় বিশাল ফারাক
  • মধ্যস্বত্বভোগীদের পোয়াবারো
  • সুবিধাবঞ্চিত চাষি-ভোক্তা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে তরি তরকারির দামে ব্যাপক ফারাক বিরাজ করছে। কৃষক যে দামে পণ্যবিক্রি করছে তার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি দামে খুচরা দোকান থেকে শাক সবজি কিনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। এতে কৃষক ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অস্বাভাবিক লাভবান হচ্ছে  পাইকার বা আড়তদাররা। কৃষকের লাভের টাকা যাচ্ছে ওই মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। কৃষি বিভাগ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষও নিরব।

গতকাল শুক্রবার সকালে বাজারে গিয়ে এমন অরাজক পরিস্থিতি দেখা গেলেও কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারী না থাকায় ক্রেতাদের মাঝে ক্ষোভ দেখা গেছে। তাদের বক্তব্য কর্তৃপক্ষ একেবারে নির্বিকার থাকায় ভোক্তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা আর মধ্যস্বত্বভোগীদের পোয়াবারো হয়েছে। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন।

উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাসকান্দর গ্রামের কৃষক মোখলেছ মিয়া বলেন, এবার এক বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। ভেবেছিলাম, আগাম এ সবজিতে ভালোই লাভ হবে। কিন্তু পাইকারদের কাছে আমি যে শিম প্রতি কেজি ৪৫ টাকায় বিক্রি করছি। খুচরা বাজারে তা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মোখলেছ মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘কষ্ট করে ফসল ফলিয়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। আর সেই ফসল কমদামে কিনে তিন গুণের বেশি দামে বিক্রি করে পুরো লাভটাই হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। আমরাও পাচ্ছিনা, জনগণও বেশি  দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় নিয়মিত বাজার তদারকি করা প্রয়োজন বেেল মনে করেন তিনি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫শ’ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত আগাম আবাদ হয়েছে প্রায় ৯০ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে উপজেলার পাইকারি বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের আগাম শীতকালীন সবজি সরবরাহ করছেন কৃষকেরা। এর ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমে এসেছে সবজির দাম।

আরও পড়ুনঃ  প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের সর্ববৃহৎ মেলা শুরু

কিন্তু পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব তেমন একটা পড়েনি। পাইকারি বাজারের চেয়ে তিন গুণ বেশি দামে সবজি কিনছেন ক্রেতারা। লাউ, টমেটো, গাজর, কাঁচা মরিচ, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ প্রায় সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দামের এমন তফাত রয়েছে।

বাজারে আসা কৃষকেরা জানান, তাঁরা মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও দাম কম পাওয়ায় লোকসান গুনছেন তাঁরা। সিন্ডিকেট করে পাইকারি বাজারে দর নিয়ন্ত্রণ করে কৃষকদের কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য করছে। অথচ এর সুবিধা পাচ্ছেনা সাধারণ ক্রেতারা।

উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের তোকদারপাড়ার কৃষক সাদ্দাম হোসেন জানান, এবার ৪০ শতাংশ জমিতে আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউ চাষ করেছেন তিনি। এসব শাকসবজি চাষে বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মিলিয়ে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে তিনি সবজি বিক্রি শুরু করছেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি লাউ বিক্রি করছি ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এ লাউ শহরের বাইপাস সড়ক সংলগ্ন মিস্ত্রিপাড়ার বাজারে পাইকারেরা বিক্রি করেছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর রেলওয়ে গেটবাজারসহ খুচরা বাজারগুলোতে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কৃষক কম দামে বিক্রি করলেও আড়তদারদের কাছ থেকে তাঁদের বেশি দামে কিনতে হয়। তা ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে। তাই খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বেশি।

কৃষকদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া বিষয়ে উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মমতা সাহা বলেন, কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ  করপোরেট থাবায় চাল

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নীলফামারীর সহকারি পরিচালক শামসুল আলম বাজারের এমন অরাজকতা নিয়ে বলেন, জনবলের সংকটের কারণে সব সময় সবদিকে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে শিগগিরই সবজি বাজার তদারকির জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন