শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেলের দামে তাকিয়ে বাজার

তেলের দামে তাকিয়ে বাজার
  • জ্বালানির দাম কমলেই কমবে পরিবহন ভাড়া-সবজির দাম
  • চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি-নিত্যপণ্য

চলতি বছরে কয়েক দফা বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। বেড়েছে সব ধরনের কাঁচামালের মূল্য। এতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাজারে। এরই মধ্যে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের দাম। যে কারণে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। আর তাতেই পাল্লা দিয়ে ফের বেড়েছে কাঁচাপণ্যের দাম। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণেই পণ্যের দামে নাগাল দেয়া যায়নি।

এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে পতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। যদি তেলের দাম কমে আসে তাহলেই পণ্যের বাজারে তার প্রভাব পড়বে। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে দেশেও সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ দেশেও তেলের দাম কমিয়ে আনা হবে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, তেলের দাম বাড়ার পর থেকেই উত্তাপ ছড়িয়েছে শাকসবজির বাজার। যা এখনো চলমান। শসার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহখানেক আগে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া এই সবজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। শিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। অবশ্য পেঁপের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।

তবে আবাসিক এলাকার অলি-গলিতে থাকা কাঁচামালের দোকানগুলোর কোনোটিতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, গাজর ১৬০ টাকা এবং কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। বরবটি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শসা হাইব্রিড ৮০ টাকা আর দেশি ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওলকচু বড় ৫০ টাকা, ছোট ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, কাঁচা কলা হালি ২৫ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  লাভের চেয়ে সেবাটাই বড় কথা

ধুন্দল ৪০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, কচুর মুখী ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, টমেটো ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা কেজি। পুঁইশাক ২০ টাকা, লালশাক ১৫ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, ডাটা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকা; তেলাপিয়া বড় সাইজ ২৯০-৩০০, মাঝারি ২৪০ টাকা, মৃগেল ২২০-২৫০ টাকা। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের কাতল মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, দুই থেকে চার কেজি ওজনের কাতল ৪০০-৪৫০ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা; বড় সাইজের বোয়াল ৭০০ টাকা; ছোট সাইজের বোয়াল বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।

তিন কেজি ওজনের দেশি রুই প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা; ছোট রুই ৩০০-৩৫০ টাকা; গ্রাস কার্প ২৫০-৩০০ টাকা; কাকিলা ৫০০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা। বাছা মাছ ৬০০ টাকা, পাবদা ৫০০ টাকা, ট্যাংরা ৬০০ টাকা, চিতল মাছ ৬০০ টাকা, কই ২০০ টাকা, দেশি শিং এক হাজার টাকা, শোল মাছ ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৬৫০ টাকা, চাষের শিং মাছ ৫০০ টাকা; টাকি মাছ ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কাওরান বাজারে সবজি কিনতে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, সবকিছুর দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। দুদিন আগের দামের সঙ্গে আজকের দাম কোনোভাবেই মিলছে না। মাংস কিনে খাওয়া তো দূরের কথা নুন এনতেই এখন পান্তা পুরায় অবস্থা। শাকসবজি খেয়েই দিন পার করছি।

আরও পড়ুনঃ  শাপলা চত্বরে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা

মাছের ক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, মাছের বাজারে আগুন লেগেছে। পানিতে চাষ হওয়া মাছ এতো গরম যে হাত দেয়া যায় না। হাত দিতে গেলেই ধোঁয়া উঠে। ১৫০ টাকার নিচে মাছই নেই বাজারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর খেকেই সবজির দাম বেড়েছে। বেশি দামে কিনে তো আর কম দামে বিক্রি করা যায় না। তাছাড়া কিনে বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসতে পরিবহন ভাড়া দিতে হয়। আগের চেয়ে ভাড়া অনেক বেশি বেড়ে গেছে। দাম বেড়েছে এটা সবাই বলে কিন্তু আমাদের লাভও সীমিত হয়ে গেছে। সরকার যদি তেলের দাম কমায় তাহলে সবজির দামও কমবে।

সূত্রমতে, গত ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিলের পর গেল বছরের ৩ নভেম্বর দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে সরকার। তখন ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয় লিটারে ১৫ টাকা করে। এই পণ্য দুটি কিনতে ভোক্তাকে লিটার প্রতি গুণতে হতো ৮০ টাকা। সবশেষ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বেড়ানো হয় ৬ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার পর। ভোক্তা পর্যায়ে লিটারপ্রতি ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৩০ টাকা।

এসময় বিপিসি তেকে বলা হয় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এমন বক্তব্যের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। পর পর কয়েক দফা কমেছে জ্বালানি তেলের দাম।

আরও পড়ুনঃ  সোমবার থেকে ৩ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশে কমানো হবে। তবে গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে এলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক বাজারে গত মঙ্গলবার জ্বালানি তেল ব্যারেলপ্রতি দাম ৩ দশমিক ২৮ ডলার বা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে ৮৬ দশমিক ১৩ মার্কিন ডলারে নেমেছে। জানুয়ারির পর এটি তেলের সর্বনিম্ন দাম। ইউরোপভিত্তিক বেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের দামও কমেছে। একই দিনে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ কমে ৯২ দশমিক ১২ ডলারে নেমেছে, যা ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন দাম। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক মাস ধরেই অপরিশোধিত তেলের দরপতনের সুবাদে পেট্রোলের দাম কমছে। দেশটিতে পেট্রোলের গ্যালনপ্রতি গড় দাম কমে এখন ৩ দশমিক ৯৫ ডলারে নেমেছে। গত মাসে মার্কিন গ্যাসোলিনের দাম ৬০ সেন্ট কমেছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন