শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরবরাহ কমায় বেড়েছে দাম

সরবরাহ কমায় বেড়েছে দাম

 বেড়েছে ডিমের উৎপাদন-পরিবহন খরচ

  • জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রভাব ডিমে

ডিম সহজলভ্য ও জনপ্রিয় খাবার। ডিমকে প্রোটিন এবং পুষ্টি উপাদানের শক্তির উৎসও বলা হয়। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যাদের ডিম রয়েছে, তাঁদের ব্যয় আরো বাড়লো। বর্তমানে রাজধানীর শনিরআখড়াতে ডিমের হালি ৫৫ টাকা। তবে কিছুদিন আগেও ডিমের হালি ছিল ৪০ টাকার নিচে।

বাজার অনুসন্ধানে জানা যায়, পাইকারি বাজারের প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ দশমিক ৩০ পয়সা। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ ক্রেতা পাচ্ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। অবশ্য এলাকা ভেদে ডিমের দামের ভিন্নতা দেখা যায়।

একটি ডিমের বায়োলজিক্যাল ভ্যালু ৯৬। আদর্শ একটি ডিমের ওজন সাধারণত ৫০ গ্রাম। একটি ডিমে এনার্জি থাকে ১৪৩ ক্যালোরি। কার্বোহাইড্রেট থাকে দশমিক ৭২ গ্রাম, প্রোটিন থাকে ১২ দশমিক ৫৬ গ্রাম, ফ্যাট ৯ দশমিক ৫১ গ্রাম। এছাড়া ফসফরাস থাকে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক থাকে ১ দশমিক ২৯ মিলিগ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন এ ডি ই বি ১২, আয়রন, কোলেস্টেরল, কোলিন ইত্যাদি।

গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের (কেরোসিন, ডিজেট, পেট্রোল এবং অকটেন) দাম বাড়ানোর পর সবকিছুর দাম বেড়েছে। হু হু করে সব খাবারের দাম চড়াও হয়ে পড়েছে। সবকিছুর সাথে ডিমের দাম বাড়ায় সংসারের ব্যয়ে অস্বস্তিও বাড়ালো।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ফার্মের মুরগির ডিমের হালি দাম সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা। সেই হিসেবে একটি ডিমের দাম দাঁড়ায় ১৩ টাকার ওপরে। কিন্তু এলাকার ভেতরে মুদি দোকানগুলোতে অনেকেই ডিমের হালি ৫৮ টাকা করে নিচ্ছে। তবে গত তিনদিন (রবিবার থেকে মঙ্গলবার) আগে ডিমের হালি আরো চড়াও দামে বিক্রি হতো। জ্বালানি তেলের বৃদ্ধির ঘোষণার অজুহাত দেখিয়ে একটি চক্র দফায় দফায় বাড়িয়ে ডিমের হালি ৬৫ টাকার ওপরে নিয়ে গিয়েছিল। সেই চড়া দামের লাগাম পড়ে গত দুইদিনে। ফলে বর্তমানে ডিমের হালি ৫৫ টাকা নিচে চলে এসেছে। এলাকাভেদে ডিমের দামের ভিন্নতা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  দেড় বছরের মেয়াদ বাড়ল পদ্মা সেতুর

ডিমের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কথা হয় শনিরআখড়ার ডিমের পাইকারি দোকানের ম্যানেজার মাসুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়া পর থেকেই ডিমের দাম চড়া। ওই সময় একশ ডিম ১২০০ টাকার বেশিতে বিক্রি হয়েছিল। তবে গত দুইদিন ধরে ডিমের দাম কমছে। বর্তমানে একশ ডিম ১১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে একটি ডিমের দাম দাঁড়ায় ১১ টাকা ৩০ পয়সা। অবশ্য তেলের দাম বাড়ার আগে একশ ডিম নয়শ টাকার নিচে বিক্রি হতো।

ডিমের সরবরাহ কমেছে জানিয়ে মাসুম বলেন, বর্তমানে পোলট্রি খাবারের দাম অনেক বাড়তি। অনেকেই ফার্মের মুরগির খাবারের ব্যয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আবার দাম বাড়ায় অনেকেই ডিমপাড়া ফার্মের মুরগি বাজারে বিক্রি করছে। ফলে ডিম সরবরাহ ঘাটতির কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। তবে কয়েকদিন সরবরাহের চিত্রটা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। বাড়ছে সামনে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

ডিমের বেচাকেনা কমে গেছে জানিয়ে আরেক ব্যবসায়ী নরুর মিয়া বলেন, আড়ৎ থেকে দোকানে ডিম আনার পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। আবার পোলট্রির খাবারের সব কিছুই দাম বেড়েছে। এছাড়া ডিমের সরবরাহ কমেছে। সব মিলিয়ে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। তবে এখন কিছুটা কমা শুরু করছে। সরবরাহ বাড়লে ডিমের দাম আরো কমবে।

কথা হয় ডিম ক্রেতা তোহিদুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, শনিআখড়া বাজার থেকে এক হালি ডিম কিনেছি ৫২ টাকা দিয়ে। তবে এলাকার ভেতরের দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা। গত পাঁচ-ছয় দিন আগে এক হালি ডিম কিনেছি ৬০ টাকা দিয়ে। আরেক ক্রেতা জোবায়ের বলেন, বাড়ির সামনে দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনেছি ৫৫ টাকা দিয়ে। গত কয়েকদিন আগে একই দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনেছিলাম ৬২ টাকা দিয়ে।

আরও পড়ুনঃ  নৌবাণিজ্যে চীনের ভূরাজনীতি

প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি করছি জানিয়ে মুদি দোকান সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতি ডিম প্রায় ১৪ টাকায় বিক্রি করছি। কিছুদিন আগ ডিমের দাম আরো বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমানে সরবাহ বাড়ায় ডিমের দাম কমেছে।

ডিমের দাম বৃদ্ধি রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলন চলছে। তাদের মধ্যে মাইনুল ইসলাম রিফাত বলেন, মুরগির ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকেই ৭দিন ডিম কেনা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলছেন। আর তারা পরামর্শ দিচ্ছেন কিছুদিন ডিম খাওয়া বন্ধ রাখলেই ডিমের দাম কমবে, এমনটা কিন্তু নয়।

তারা বলছেন, এভাবে ডিম খাওয়া বন্ধ রাখলে খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও ডিম উৎপাদন বন্ধ হবে। পরবর্তীতে ডিমের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সব মিলিয়ে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হচ্ছে মুরগির খাদ্য ও ঔষধের অধিক মূল্যবৃদ্ধি এবং যানবাহনের তেলের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া আদায়। খাদ্য, ঔষধ এবং তেলের দাম কমলেই কমবে ডিমের দাম এমনি ধারণা সাধারণ মানুষের।

সংবাদটি শেয়ার করুন