শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্যাকেট থেকে উধাও বিস্কুট

প্যাকেট থেকে উধাও বিস্কুট

রাস্তায় খিদে পেলে অনেকেরই ভরসা বিস্কুট। শুধু তাই নয়, চায়ের সঙ্গে বিস্কুট না হলে জমে না বাঙালির আড্ডা। তবে, এবার সেই বিস্কুটের মূল্য গরম চায়ের থেকেও বেশি হাত পোড়াচ্ছে ক্রেতাদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর আকাশছোঁয়া। এর জের আছড়ে পড়েছে বিস্কুটশিল্পেও। আটা, জ্বালানিসহ অধিকাংশ কাঁচামালের মূল্যের উর্ধগতিতে দাম বৃদ্ধির পথে হাঁটছে বিস্কুট কোম্পানিগুলো। ইতোমধ্যেই অধিকাংশ ব্র্যান্ড-ননব্র্যান্ড কোম্পানির বিস্কুটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মিলছে না চায়ের সঙ্গে টায়ের হিসেব। এদিকে বিস্কুট শুধু বড়দের খাবারই নয়, এটা শিশুদের খাবার হিসেবেও ব্যবহার হয়। এছাড়া অতিথি আপ্যায়নেও বিস্কুটের গুরুত্ব রয়েছে। ফলে বাজার দর নিয়ে বিপাকে সাধারণ মানুষ।

হাতে তৈরি ও মেশিনজাত (নন-ব্র্যান্ড) বনরুটি, বিস্কুট, কেকজাতীয় খাদ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ী সমিতি। তবে, বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে আরও বেশি। নন-ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ব্র্যান্ডের বিস্কুটের দাম না বাড়লেও কৌশলে বিস্কুটের আকার ছোট করে বাজার ধরে রেখেছে বিস্কুট কোম্পানীগুলো।

বাজারে ব্র্যান্ড-ননব্রান্ড সব ধরণের বিস্কুটের দাম বেড়েছে। খোলা বিস্কুটের নূন্যতম দামও রাখা হচ্ছে পাঁচ টাকা, যা আগে ছিল দুই-তিন টাকা। এসব খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত ময়দা, চিনি, ডালডা ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এ দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ীরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে কিছু বিস্কুটের দাম বেড়েছে। কিছু বিস্কুটের দাম সরাসরি না বাড়িয়ে প্যাকেটে বিস্কুটের পরিমাণ কমানো হয়েছে। কোনো কোনো বিস্কুটের প্যাকেট আকারে ছোট করা হয়েছে। অলিম্পিকের এনার্জি বিস্কুট ৫ ও ১০ টাকার প্যাকেট ছোট করা হয়েছে। ৩৫ টাকার প্যাকেটের দাম বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। প্রাণ কোম্পানীর ফ্রুট ফান মিনি প্যাকেটে থাকে চার জোড়া যুক্ত বিস্কুট, বিস্কুটের সংখ্যা না কমলেও আকারে ছোট করা হয়েছে। নাটি মিনি প্যাকেটে থাকে ৪টি বিস্কুট। লেকসাস প্যাকেটেও ৪টি বিস্কুট। অলটাইম টুইন মিনি প্যাকে থাকে দুটি কেক। এগুলো আকারে ছোট করা হয়েছে। অলটাইম মেগা বাটার বনও আকার ছোট হয়েছে। রিদিসার চকো ফান ১০ টাকার প্যাকেটে ৫ জোড়া বিস্কুটের ওজন ছিল ৬০ গ্রাম। এখন করা হয়েছে ৪৭ গ্রাম। মি. কুকির প্যাকেটও আকারে ছোট করা হয়েছে। ১৫ টাকার বনরুটি ২৫ টাকায় নেয়া হয়েছে। এদিকে শিশুদের মুখরোচক খাবার সান চিপস ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য চিপসের দাম না বাড়লেও চিপসের পরিমাণ ২০ গ্রাম থেকে নামিয়ে করা হয়েছে ১৭ গ্রাম। শিশুখাদ্য ১৪০ টাকার ফ্যামেলি প্যাক লুডলস করা হয়েছে ১৬০ টাকা। নন-ব্র্যান্ড বেকারির সব ধরণের বিস্কুট আকারে ছোট করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  প্রাণী পাচার বা হত্যার তথ্য দিলেই ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার

পাইকারি বিক্রেতার বলছেন, কোম্পানী যেভাবে প্যাকেট তৈরি করবে আমাদের সেভাবেই বিক্রি করতে হবে। তবে হঠাৎ পণ্যের দাম বাড়লে বা পরিমাণ কমে গেলে বিক্রি কমে যায়। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, প্যাকেটে পণ্যের পরিমাণ কমে গেলে ক্রেতাদের কাছে বিপাকে পড়তে হয়।

স্থানীয় বেকারীর মালিকরা জানান, বিস্কুটসহ বেকারীর সকল পণ্যের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। কাঁচামালের দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই দ্রব্যের দাম বেড়ে যায়।

টাঙ্গাইল জেলা ব্রেড বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন অনেকটা কমে গেছে।

টাঙ্গাইল জেলা ব্রেড বেকারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসমত আলী জানান, বেকারী দ্রব্যের সবধরণের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ফলে কিছু দ্রব্যমূল্য বাড়ানো বা আকারে ছোট করলেও কোম্পানীগুলো লোকসানের মুখে রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হচ্ছে। এনজিও বা সুদে টাকা এনে মালিকরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে কাঁচামালের দাম কমানোর জোর দাবি জানান।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন