শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গমের বদলে চালের রুটি

গমের বদলে চালের রুটি
  • ডলার সংকটে কমছে আমদানি
  • খাব না, গমের আটার রুটি খাব না: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
  • খাদ্যাভ্যাস বদলে গমের চাহিদা বেড়েছে ৭০-৭৫ লাখ টন

বিশ্ব বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম পণ্যভেদে ১৫ হতে ৪৮ শতাংশ কমলেও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি কমেছে। এতে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি বছরের মে মাসে সিলেটে বন্যা হওয়ায় খাদ্যশস্যের বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে দেশ। কেননা এ অঞ্চলে দেশের খাদ্যের এক চতুর্থাংশই উৎপাদন হয়ে থাকে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও বিশ্ব বাজার নাচাচ্ছে। যদিও সম্প্রতি দেশ দুটি খাদ্যশস্য বিক্রির বিষয়ে চুক্তি করেছে। তবে ডলারের বাজার অস্থির থাকায় ব্যবসায়ীরা আমদানিতে ঝুঁকি নিতে রাজি হচ্ছে না।

আমদানি ও ঋণপত্রের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে গমের আমদানি বেশি কমেছে। চালের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার গত ৩০ জুন প্রথম দফায় বেসরকারিখাতে চার লাখ টন আমদানির অনুমতি দিলেও ১ শতাংশের বেশি আমদানি হয়নি। অপরিশোধিত ভোজ্যতেল, সয়াবিন তেল উৎপাদনের কাঁচামাল সয়াবিন বীজ ও ডালের আমদানি স্বাভাবিকই রয়েছে।

গত ১৩ মে ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গমের আমদানি কমতে শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে মূলত জুন মাসে। ২০২১ সালের জুন মাসে গম আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ১১ হাজার টন, এ বছর একই সময়ে আমদানি হয় ২ লাখ ১২ হাজার টন। আবার গত বছর জুলাই মাসের প্রথম ২৫ দিন আমদানি হয় ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন, এ বছর একই সময়ে আমদানি হয় ১ লাখ ২১ হাজার টন। অর্থাৎ প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে আমদানি ৫৭ শতাংশ কমেছে।

আরও পড়ুনঃ  রংপুরে পাতা পেঁয়াজের দামও ঊর্ধ্বমুখী

বছরখানেক আগেও দেশে চাহিদার ৪৫ শতাংশের মতো গম আমদানি হতো রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর এই দুটি দেশ থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে গেলেও ভারত থেকে আমদানি হচ্ছিল। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে হোঁচট আসে খাদ্যশস্য আমদানিতে। দেশটি রপ্তানি বন্ধের পর ১৩ মে থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এর ৭৬ শতাংশই এসেছে ভারত থেকে, যেগুলো নিষেধাজ্ঞার আগে ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এখন নতুন করে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জুন মাসে গম আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার টন। ১৬ জুলাই পর্যন্ত খোলা হয়েছে ৬৩ হাজার ৩০০ টনের। ছোটখাটো আমদানিকারকেরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে গমের তৈরি পণ্যের চাহিদা বেড়ে ৭০-৭৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। দেশে বছরে গড়ে ১১ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়। চাহিদার বাকি গম আমদানি করে মেটানো হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, গত অর্থবছরে গম আমদানি হয়েছে ৬২ লাখ টন।

গম আমদানি কমে আসার সময় মজুত কমছে সরকারি গুদামেও। ২২ জুলাই সরকারি গুদামে ১ লাখ ৫৯ হাজার টন গমের মজুত ছিল, যা গত বছরের চেয়ে কম। গত বছর একই সময়ে গমের মজুত ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার টন।

বাড়েনি চালের আমদানিও
বোরো মৌসুমে ফলন ওঠার পর দেশে চালের মজুত রয়েছে। এরপরও দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকার গত জুনের শেষে ৯৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত চার হাজার টনের বেশি চাল আমদানি হয়নি। আবার অনুমতি দেওয়া চাল ২১ জুলাইয়ের মধ্যেই ঋণপত্র খুলার শর্ত বেধে দেয়া হয়। তবে ১৬ জুলাই পর্যন্ত চাল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৪৪ হাজার টনের। অর্থাৎ সময়সীমার দুই-তৃতীয়াংশ পেরিয়ে যাওয়ার পর ১১ শতাংশ চাল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দুই দফায় আরও ৬২ প্রতিষ্ঠানকে প্রায় এক লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয় গত এক সপ্তাহে।

আরও পড়ুনঃ  ‘খাদ্যে ভেজাল কঠোরভাবে দমন করা হবে’

গত অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর এই পাঁচ মাসের হিসাবে দেশে খাদ্যশস্যের আমদানি বেড়েছে ১২ শতাংশ। বিপরীতে এ সময় আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৯২ শতাংশের বেশি। এই খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে এককভাবে চালের আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় চার হাজার শতাংশ। আর গমে বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে খাদ্যশস্য আমদানি বেড়েছিল ৩.৫ শতাংশ, বিপরীতে ব্যয় বেড়েছিল ৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চাল ও গমের মোট উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ টন। এর পরের অর্থবছরে উৎপাদন কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৮ হাজার টনে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৯৪ হাজার টন চাল ও গম উৎপাদন হয়। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল ও গমের উৎপাদন কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টন।

কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে গমের রুটির বদলে চালের রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। গমের রুটি না খেলে সেটি আমদানি করতে হবে না, এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলেও মত দেন তিনি।

গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে বিয়াম ভবনের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের অধীন দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা-বিষয়ক ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এ পরামর্শ দেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খাব না, গমের আটার রুটি খাব না। তাহলে আমার গম ইমপোর্ট করতে হবে না। আমার ফরেন কারেন্সি যেটা আছে, সেটাতে শর্ট পড়বে না। আমার ডলার শর্ট পড়বে না। আমরা সবাই যেন গমের আটার রুটি খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছি। আমরা তিন মাস গমের রুটি না খাই। দেখি না কী হয়? আমরা চালের আটার রুটি খাব। অসুবিধা কোথায়?’

আরও পড়ুনঃ  এই বাংলার মাটিতে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন