রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জ্বালানির দাম বাড়ানোর আভাস

জ্বালানি তেলের
  • ৮ বছরে বিপিসির লাভ ৫০ হাজার কোটি টাকা
  • বেড়েছে ১৩ দফা কমেছে ৫ দফা

জ্বালানি তেলের দামে উল্টো ঘোড়া দৌড়ে পারদর্শী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটি গত আট বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে আবারো দাম বাড়ানোর পথে রয়েছে। ইতিপূর্বে বিশ্ববাজারের কথা বলে জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে কিন্তু সেখানে কমলেও দেশে কমায়নি। এখন আবার বিশ্ববাজারকে সামনে এনে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

যখনই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে তখনই জ্বালানি বিভাগ থেকে বিপিসির লোকসানের কারণ দেখিয়ে দাম সমন্বয় বা দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে গত নভেম্বর মাসে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিপিসি গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত কোনো বছরই জালানি তেল বিক্রি করে লোকসান দেয়নি। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৪৮ হাজার ১২২ কোটি ১১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে তেল বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি নিট মুনাফা করেছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপিসি লোকসান গুণছে, এই অজুহাতে দাম বাড়ানোর জন্য জ্বালানি বিভাগ থেকে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে বলে সূত্র জানায়।

আরও পড়ুনঃ  ফের বাড়ছে দাম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, ক্রমান্বয়ে তেল, গ্যাস, সার ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। তবে তা ভোক্তাদের সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। সম্প্রতি বলেছেন, তেলের দাম বাড়ানো বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ভোক্তাদের যাতে তেমন কোনো অসুবিধা না হয় সে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’তে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিপিসির লাভ-লোকসানের খতিয়ানও উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে বিপিসি তেল বেচে মুনাফা করা শুরু করে। সে বছর মুনাফার পরিমাণ ছিল চার হাজার ১২৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর পরের অর্থবছর ২০১৫-২০১৬ তে মুনাফা করে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মুনাফা আট হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে একইভাবে মুনাফা করেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর পাঁচ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর চার হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পাঁচ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছর সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মে ২২ মে পর্যন্ত মুনাফা হয়েছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে বিপিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপিসি এখন চাপে পড়েছে। প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির প্রায় শতকোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। কিন্তু এতেও আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হতো না, যদি না আমাদের রিজার্ভে পর্যাপ্ত অর্থ থাকতো। বিপিসির রিজার্ভে থাকা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা একটি আইনের বলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। ফলে লোকসান পুষিয়ে নিতে তেলের দাম বাড়াতে হবে, অথবা ভর্তুকি দ্বিগুণ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  পেট্রোল অকটেন ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়লো

অবশ্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন তার এক লেখায়। সেখানে বলা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ৬ মে জ্বালানি তেলের প্রথম মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তৎকালীন সরকার পাঁচ বছরে মোট আটবার ডিজেল-কেরোসিনসহ অন্যান্য জ্বালানি ও পণ্যের দাম বাড়িয়েছিল।

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসার মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ২৭ ডিসেম্বর ২০০১ তারিখে ডিজেল, কেরোসিনসহ প্রায় সব জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ায়। দ্বিতীয় দফায় ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি, তৃতীয় দফায় ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর, চতুর্থ দফায় ২০০৫ সালের ২৫ মে, পঞ্চম দফায় ২০০৫ সালের ২০ জুলাই, ষষ্ঠ দফায় ২০০৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, সপ্তম দফায় ২০০৬ সালের ৯ জুন ও অষ্টম দফায় ২০০৬ সালের ২৬ জুন জ্বালানির মূল্য বাড়ায়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের সাত দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি ডিজেল এবং কেরোসিনের মূল্য কমিয়ে দেন। এরপার আবার ২০০৯ সালের ১ মার্চ জ্বালানির মূল্য কমান, ২০০৯ সালের ১ জুন ও ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল এবং ২৫ এপ্রিল জ্বালানি মূল্য কমানো হয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০০৯ সাল থেকে এযাবৎ মোট পাঁচবার জ্বালানি মূল্য কমানো হয়। তা ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ৬ মে ২০১১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১১ নভেম্বর ২০১১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ এবং ৪ জানুয়ারি ২০১৩ সালে পাঁচবার জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি করে। আওয়ামী লীগের তেরো বছরের মেয়াদে মোট পাঁচবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ও পাঁচবার কমানো হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ  মমতার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন